৪৭ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানির দাম নেমেছে শূন্যের কোঠায়

উইওয়ার্ক কোম্পানিকে চিহ্নিত করা হতো একটি সফল স্টার্টআপের উদাহরণ হিসেবে। একসময় শেয়ারবাজারের বাইরে এর মূল্যমান নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে উইওয়ার্কের শেয়ারের দাম গত সপ্তাহে শূন্যের কাছাকাছি চলে আসে।

বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যক্তির জন্য কাজের জায়গা বা কার্যালয় ভাড়া দেয় উইওয়ার্ক। তাদের সবচেয়ে বিনিয়োগ জুগিয়েছিল সফটব্যাংক। শুরুতে বেশ সফল ছিল এই কোম্পানি। তবে এখন উইওয়ার্ক সতর্ক করেছে যে কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।

উইওয়ার্কের সমস্যা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে, যখন এটি বাজারে প্রাথমিক শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনা করছিল। তখন বেরিয়ে আসে যে কোম্পানিটি বড় লোকসান দিয়েছে, এটিতে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাডাম নিউম্যানের ব্যবস্থাপনার ধরন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এরপরই সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে যায়।

পরের বছরগুলোতে উইওয়ার্ক সমস্যা থেকে বেরিয়ে না এলেও কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালে বাজারে শেয়ার ছাড়ে। তবে এর আগে কোম্পানির যে মূল্যমান নির্ধারণ করা হয়েছিল, শেয়ারের দাম ঠিক করা হয় তার চেয়ে কম মূল্যের ওপর ভিত্তি করে। কোম্পানিটি অবশ্য আর কখনোই লাভের মুখ দেখেনি।

তাদের মূল বিনিয়োগকারী, জাপানের বড় কোম্পানি সফটব্যাংক শেয়ারের দাম বাড়াতে এরপরও শত শত কোটি ডলার ঢেলেছে। কিন্তু উইওয়ার্ক ক্রমাগত লোকসান দিয়ে গেছে।

যেসব শেয়ারের দাম সবচেয়ে কম, অর্থাৎ যেগুলো ‘পেনি স্টকস’ হিসেবে পরিচিত, উইওয়ার্ক তাদের একটি। বুধবার তাদের শেয়ারের দাম শূন্যের কাছাকাছি নেমে গেলেও শুক্রবারে উইওয়ার্কের বিপুলসংখ্যক শেয়ার বিক্রি হয়, ফলে দাম কিঞ্চিৎ বাড়ে।
হারগ্রিভেস ল্যান্সডাউনের ইকুইটি ফান্ড বিভাগের প্রধান স্টিভ ক্লেটন বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্টার্টআপের মধ্যে উইওয়ার্ককে নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বাগাড়ম্বর হয়েছে।

বাজারে আসার পর উইওয়ার্কের শেয়ার প্রায় পুরো মূল্য হারিয়েছে। সেই থেকে অসংখ্য নির্বাহী চাকরি ছেড়েছেন। প্রধান নির্বাহী সন্দীপ মাথরানি কোম্পানি ছেড়েছেন গত মে মাসে। চলতি সপ্তাহে পরিচালনা পর্ষদের তিনজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। উইওয়ার্ক বলছে, তারা একজন প্রধান নির্বাহী খুঁজছে।

কোম্পানিটির বিজনেস মডেল হলো এ রকম—তারা কোনো একটি ভবনের জায়গা লম্বা সময়ের জন্য ভাড়া নেয়। এরপর অল্প সময়ের জন্য তা আবার ভাড়া দেয়। তাদের ব্যবসা তরতর করে বাড়ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি এরপর পুরো পরিস্থিতি বদলে দেয়। শেয়ার করা হয় এমন অফিসের চাহিদা তখন কমে যায়।

সফটব্যাংক অবশ্য অর্থ ঢেলেই চলছিল। সফটব্যাংকের প্রধান, মাসাইয়োশি সন, ব্যক্তিগতভাবে নিউম্যানকে সমর্থন জানিয়ে গেছেন। এমনকি ২০১৯ সালে উইওয়ার্ক প্রাথমিক শেয়ার বাজারে ছাড়তে ব্যর্থ হওয়ার পরও তিনি এক হাজার কোটি ডলার অর্থসহায়তা দেন।

সফটব্যাংক এরপর উইওয়ার্কের শত শত কোটি ডলারের লোকসান নিজের ঘাড়ে নেয়। মাসাইয়োশি সন একসময় উইওয়ার্কের প্রতি তাঁর সমর্থনের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেন। গত মার্চে উইওয়ার্ক তাদের ঋণ ১৫০ কোটি ডলার কমিয়ে আনতে একটি সমঝোতা করে।

খরচ কমিয়ে আনার ফলে তাদের লোকসান খানিকটা কমে। উইওয়ার্ক জানিয়েছে, অফিস ভাড়ার খরচ কমিয়ে এনে এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় হ্রাস করে তারা নগদ অর্থের সরবরাহ বাড়াতে চায়। ভারতে তাদের একটি শাখা রয়েছে। এই শাখা জানিয়েছে, মূল কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, তা তাদের ওপর কোনো প্রভাব রাখবে না।