খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও। এ ছাড়া বাজারে আলুর দাম কেজিতে ৫–১০ টাকা বেড়েছে।
বাজারে সরবরাহ বাড়ানো ও দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপ থাকা শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। অতিবৃষ্টির কারণে চাষ বিঘ্নিত হওয়ায় বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ আসতে দেরি হবে। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় বেশি। এসব কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, কাঁঠালবাগান ও শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পাবনার পেঁয়াজ পাইকারি বাজার থেকে ১৪৭ টাকায় কিনে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তারপরও ক্রেতারা কিনছেন না। এ নিয়ে খুব বিপদে আছি আমরা। ভাবছি, এত দামে আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করব না।মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বিক্রেতা আব্বাস আকন্দ
খুচরা বাজারে ভালো মানের প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ এখন ১৫০–১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য সাধারণ মানের দেশি পেঁয়াজ আরও ১০ টাকা কমে পাওয়া যায়। গত সপ্তাহেও দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ১২৫–১৪০ টাকা। অন্যদিকে বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি এখন ১১০–১২০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ১০–২০ টাকা কম ছিল।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আর এক বছর আগের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ৩৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে দেশে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। গত এক মাসে এ দাম প্রায় ৮ শতাংশ ও এক বছরে তা ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বিক্রেতা আব্বাস আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাবনার পেঁয়াজ পাইকারি বাজার থেকে ১৪৭ টাকায় কিনে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তারপরও ক্রেতারা কিনছেন না। এ নিয়ে খুব বিপদে আছি আমরা। ভাবছি, এত দামে আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করব না।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। অতিবৃষ্টির কারণে চাষ বিঘ্নিত হওয়ায় বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ আসতে দেরি হবে। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় বেশি।
পেঁয়াজের আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে কৃষকের ঘরে দেশি পেঁয়াজের মজুত প্রায় শেষের দিকে। অন্য বছরগুলোতে অক্টোবরের মধ্যেই মুড়িকাটা বা আগাম পেঁয়াজের আবাদ শেষ হয়ে যায়। সেই পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এবার মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের চাষে দেরি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন লাগতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম অনেকটাই আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন। এ চাহিদার ৭৫–৮০ শতাংশই পূরণ হয় স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে; বাকি চাহিদা আমদানি করে পূরণ করা হয়।
বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি ও দাম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি লিখেছে। বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক রয়েছে।
ট্যারিফ কমিশন জানায়, পেঁয়াজ আমদানির অন্যতম উৎস প্রতিবেশী দেশ ভারত। সম্প্রতি ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির শর্ত শিথিল করলেও পণ্যটির ওপরে এখনো ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক বহাল রেখেছে। ফলে দেশটি থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। সে কারণে পেঁয়াজ আমদানিতে থাকা ৫ শতাংশ শুল্ক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রত্যাহারের সুপারিশ করে ট্যারিফ কমিশন।
বৃষ্টির কারণে এবার মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের চাষে দেরি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন লাগতে পারে।
গতকাল বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাড়ামহল্লার দোকানে এর দাম আরও পাঁচ টাকা বেশি ছিল। দুই সপ্তাহের মধ্যে আলুর কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা। বিক্রেতারা জানান, এখন পাইকারিতেই প্রতি কেজি আলু ৫৬-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির দামও কম দামে স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৫৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৫ টাকা বেশি ছিল। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগির কেজি ১০ টাকা কমে ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গতকাল এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০-১৬০ টাকা দরে। মরিচের দাম দুই সপ্তাহ আগে আড়াই শ টাকার ওপরে ছিল। অন্যান্য সবজির মধ্যে পটোল, লাউ, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, মিষ্টিকুমড়া ৫০-৬০ টাকায়; বেগুন ৮০-১২০ টাকায়; করলা ও কাঁকরোল ৮০-১০০ টাকায় ও পেঁপে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিছুদিন আগেও বেশির ভাগ সবজির দাম এক শ টাকার ওপরে ছিল। সবজি বিক্রেতারা জানান, শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমে আসবে।