কোরবানির ঈদের মাসখানেক বাকি। ইতিমধ্যে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৮০-১০০ থেকে বেড়ে ১৫০-১৬০ টাকা হয়েছে। গত কোরবানির সময়ে ঢাকায় কাঁচা মরিচের কেজি ৭০০ টাকায় উঠেছিল। বছরের এই সময়ে দেশে কাঁচা মরিচের কিছুটা সংকট থাকে। তাতে আমদানি করে প্রয়োজন মেটাতে হয়। এবার দাম বাড়তে থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বাজারে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজার, মহাখালী ও কারওয়ান বাজার ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টির কারণে মরিচের সরবরাহ কমেছে। এতে বাড়ছে দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা বেড়েছে। এদিকে বাজারে এখন যে মরিচ আসছে, তা মানে খুব ভালো না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গ্রীষ্মকালীন মরিচের গাছ এখন শুকিয়ে এসেছে। ফলনও আগের তুলনায় কমে এসেছে।
এবার দাম বাড়তে থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বাজারে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল।
রাজধানীর মহাখালীর সবজি বিক্রেতা আবু বকর প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। বছরের এই সময়ে কাঁচা মরিচের দাম প্রতিবছর বাড়ে বলে জানান তিনি।
পাবনার ঈশ্বরদীর আড়তে গতকাল প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। সেখানকার আড়তদার আদম আলী প্রথম আলোকে বলেন, খরা ও এক দফা বৃষ্টির কারণে মাঠ থেকে সবজি সরবরাহ কমেছে। তাতে বেড়েছে দাম।
রোজার মধ্যে কিছু পণ্যের দাম কমলেও এখন আবার বেড়েছে। ডিম–মুরগির মতো পণ্যের সঙ্গে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসারের খরচ বেড়ে গেছে।মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান
বাজারে কাঁচা মরিচের মতো পণ্যের সংকট কাটাতে দ্রুত আমদানি খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবার এই সময়ে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এবার বাজার বেড়ে যাওয়ার আগে সেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি সবজির বাজার স্থিতিশীল করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যায়, সেটাও সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গনিরোধ শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়া হয়নি। তবে বাজার পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
প্রতিবার এই সময়ে কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এবার বাজার বেড়ে যাওয়ার আগে সেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি সবজির বাজার স্থিতিশীল করতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যায়, সেটাও সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে।বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার
বাজারে আলু ও বেগুনের সঙ্গে অন্যান্য সবজির দাম এখনো চড়া। আলু প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর বেগুন প্রতি কেজি মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকা। পেঁপের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বরবটি, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙের মতো সবজির দাম পড়ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সবজির মধ্যে প্রতি কেজি ৫০ টাকার আশপাশে আছে ঢ্যাঁড়স ও পটোল। একটি লাউয়ের দাম পড়ছে আকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আর প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ভারত থেকে কিছু পেঁয়াজ এলেও বাজারে তার প্রভাব নেই।
অপর দিকে কিছুটা কমেছে সোনালি মুরগির দাম। প্রতি কেজি ৪০০ টাকা থেকে দাম কমে হয়েছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজির দাম ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। গরুর মাংসের প্রতি কেজি দাম পড়ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি। বাজারে ডিমের দাম এখনো চড়া। বাদামি ডিমের ডজন ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। আর সাদা ডিমের ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা।
লাউয়ের দাম পড়ছে আকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আর প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ভারত থেকে কিছু পেঁয়াজ এলেও বাজারে তার প্রভাব নেই।
মাছের বাজার গত সপ্তাহের মতোই আছে। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ও পাঙাশের দাম পড়ছে আকারভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আর চাষের রুই মাছের কেজি পড়ছে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। হাওরের রুই মাছের দাম আরও বেশি। দেশি অন্যান্য মাছ সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এদিকে বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, সয়াবিন, চিনিসহ নানা পদের মসলার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে।
মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রোজার মধ্যে কিছু পণ্যের দাম কমলেও এখন আবার বেড়েছে। ডিম–মুরগির মতো পণ্যের সঙ্গে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসারের খরচ বেড়ে গেছে।