অবরোধের প্রভাব

শীতের গরম কাপড়ের ব্যবসা মন্দা

পাইকারিতে সাধারণত শীতের কাপড়ের বিক্রি জমে নভেম্বরে। কিন্তু এবার ব্যবসা খুব একটা জমেনি। শীত জেঁকে বসলে খুচরায় ভালো ব্যবসার আশা।

হরতাল-অবরোধের কারণে শীতের গরম পোশাকের পাইকারি ব্যবসা এবার খুব বেশি জমেনি। শপিং মল বা বিপণিবিতানে খুচরা পর্যায়েও বেচাকেনা আশানুরূপ নয়। তবে ফুটপাতে শীতের পোশাকের দোকানে কিছুটা ভিড় দেখা যাচ্ছে। গতকাল পাবনার আবদুল হামিদ সড়কে
ছবি: হাসান মাহমুদ

রাজধানীর পাইকারি বাজারে শীতের গরম কাপড়ের বিক্রি এখনো জমে ওঠেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছর এ সময়ে শীতের গরম কাপড়ের পাইকারি বিক্রি জমে যেত। কিন্তু এবার অবরোধের কারণে বেচাকেনায় গতি নেই।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণত পাইকারিতে শীতের বেচাকেনা জমে নভেম্বর মাসের শুরু থেকে। আর খুচরায় বেচাকেনা জমে ওঠে ডিসেম্বর থেকে। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। পাইকারিতেই এখনো ব্যবসা জমেনি। তবে হঠাৎ শীত জেঁকে বসলে তখন ব্যবসা ভালো হতে পারে বলে আশা বিক্রেতাদের।  

রাজধানী ঢাকায় শীতের গরম পোশাকের বড় পাইকারি বাজার বঙ্গবাজার ও গুলিস্তান এলাকাজুড়ে। এ ছাড়া রাজধানীর পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায়ও রয়েছে শীতের গরম পোশাকের পাইকারি ব্যবসা। গতকাল সোমবার এসব এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবসার মন্দাভাবের তথ্য জানা গেছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবরোধের কারণে ঢাকার বাইরের ক্রেতারা ঢাকায় আসছেন কম। কিছু ক্রেতা কুরিয়ারে মালামাল সংগ্রহ করছেন। কিন্তু সেই বেচাকেনাও আশানুরূপ নয়।

হরতাল-অবরোধ শুরুর আগে বেচাকেনা ভালোই হচ্ছিল। বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পরে দুই ঈদে ভালো ব্যবসা করতে পারেনি এখানকার ব্যবসায়ীরা। তাই শীতকেন্দ্রিক সবার ভালো ব্যবসার আশা ছিল।
জহিরুল ইসলাম, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হরতাল-অবরোধ শুরুর আগে বেচাকেনা ভালোই হচ্ছিল। বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পরে দুই ঈদে ভালো ব্যবসা করতে পারেনি এখানকার ব্যবসায়ীরা। তাই শীতকেন্দ্রিক সবার ভালো ব্যবসার আশা ছিল। প্রস্তুতিও সেভাবে নিয়েছিল। কিন্তু গতবারের অর্ধেক ব্যবসাও এবার হয়নি।

বঙ্গবাজার, অ্যানেক্স টাওয়ার ও গুলিস্তানকেন্দ্রিক অন্তত পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী শীতের গরম কাপড়ের মৌসুমি ব্যবসায় নামেন। এসব ব্যবসায়ী শীত আসার আগে এক দফা পাইকারি ব্যবসা করে নেন। তারপর শীতের মৌসুম জুড়ে খুচরা ব্যবসাও করেন। কিন্তু এবার পাইকারি ও খুচরা দুই ব্যবসায় এখন পর্যন্ত মন্দা। 

বঙ্গবাজারের এফএনএফ গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্যবার এ সময়ে দিনে ন্যূনতম লাখ টাকার শীতের গরম পোশাক বিক্রি হতো। কখনো তা দুই লাখ টাকাও ছাড়িয়ে যেত। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর অনেক ক্রেতা বঙ্গবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এর মধ্যে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি শুরু হওয়ায় এখন দিনে ২০ হাজার টাকার বেচাকেনাও হচ্ছে না।

অর্থনৈতিকভাবে সাধারণ মানুষ চাপে আছে। তাই এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য আগের মতো নেই। শীতের মৌসুমি ব্যবসার জন্য আমরা সারা বছর যে সময়টার অপেক্ষায় থাকি, সেই সময়ই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চলছে। তাতে ঢাকার বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন না।
নজরুল ইসলাম, পারিজাত সিটি শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর বঙ্গবাজার-গুলিস্তানের বাইরে শীতের গরম কাপড়ের পাইকারি বাজারের মধ্যে অন্যতম কেরানীগঞ্জ। এই পোশাকপল্লিতে তিন শতাধিক শপিংমল আছে। ছোট ও মাঝারি আকারের পোশাক কারখানাসহ সেখানে আছে ১০ হাজারের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। শীত মৌসুমে এ এলাকার বেশির ভাগ দোকানে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি ওঠে শীতের গরম কাপড়। কিন্তু এবার এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বেচাকেনা এখনো সেভাবে জমেনি।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুসলিম ঢালি প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় কম দামি শীতের পোশাক তৈরি অগ্রাধিকার পেয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল লাভ কম হলেও বিক্রি যেন ভালো হয়; কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেচাকেনা সেভাবে করতে পারিনি।

এ ছাড়া কামরাঙ্গীরচরের তৈরি পোশাকের দোকানগুলোর মধ্যে সহস্রাধিক দোকানে মৌসুমে শীতের কাপড় বেচাকেনা হয়। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার মিতালি মার্কেট এলাকায় ১৪টি ভবনে প্রায় দেড় হাজার কাপড়ের দোকান ও ছোট পোশাক কারখানা আছে। সেখানে একটু কম দামি পণ্য তৈরি হয়। একই এলাকার পারিজাত কম্বলের বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ী আছেন দুই শতাধিক। এ ছাড়া রয়েছে কম্বল তৈরির বেশ কিছু কারখানাও।

পারিজাত সিটি শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনৈতিকভাবে সাধারণ মানুষ চাপে আছে। তাই এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য আগের মতো নেই। শীতের মৌসুমি ব্যবসার জন্য আমরা সারা বছর যে সময়টার অপেক্ষায় থাকি, সেই সময়ই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চলছে। তাতে ঢাকার বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন না। আবার আমরা ঝুঁকি নিয়ে জেলায় মালামাল পাঠাতে পারছি না। তবে সামনে যেহেতু নির্বাচন, তাই নির্বাচন সামনে রেখে বেচাকেনা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

শীত জেঁকে বসার আগে পাইকারিতে ব্যবসা জমলেও খুচরায় বেচাকেনা জমে শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে। তাতে এখনো ব্যবসার সময় শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করেন অনেক ব্যবসায়ী। গুলিস্তানের ফুটপাতের ব্যবসায়ী মো. রিপনও তেমনটাই মনে করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আমরা মৌসুমি ব্যবসায়ী। যখন যেটা চলে, তখন সেটি বিক্রি করি। এখনো হাঁকাহাঁকি করে ক্রেতা পাচ্ছি না। কিন্তু ঠান্ডা একটু বেশি পড়লে দেখা যাবে, লাইন ধরে মানুষ শীতের কাপড় কিনবেন।

দরদাম যেমন

শীতের গরম কাপড়ের বাজার সাধারণত দুই ধরনের। একটি কম্বলের বাজার। অন্যটা জ্যাকেট-সোয়েটারের মতো পোশাক। বাজারে এই দুই ধরনের পণ্যের দামই এবার একটু বেশি। ব্যবসায়ীদের দাবি, কাপড় ও মজুরি বাবদ খরচ বেড়েছে। যার কারণে পণ্যের দামও বেড়েছে। এবার মান ও আকারভেদে প্রতিটি জ্যাকেট ও সোয়েটারের দাম ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা।

কম্বলের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশি কম্বলের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা। আর আমদানি করা কম্বলের দাম একটু বেশিই বেড়েছে। বিদেশি একেকটা কম্বলে দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। ঢাকায় একটি দেশি কম্বল কিনতে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। আর বিদেশি কাপড়ের কম্বলের দাম শুরু ৮০০ টাকা থেকে। আমদানি করা এসব কম্বল মানভেদে আট হাজার টাকাও হয়ে থাকে।