বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নসংক্রান্ত টাস্কফোর্স সরকারি টাকা খরচে সুশাসনের অভাব ও অপচয়ের কারণ খুঁজে বের করবে। এই টাস্কফোর্স টেকসই উন্নয়নের একটি স্বল্পমেয়াদি কৌশল তৈরি করবে।
আজ বৃহস্পতিবার বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা শেষে টাস্কফোর্সের সভাপতি কে এ এস মুরশিদ সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নাজিয়া সালমা ভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ ছাড়া টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যরা নিজেদের মতামত দেন। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে টাস্কফোর্স প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানা গেছে।
কে এ এস মুরশিদ সাংবাদিকদের বলেন, অর্থনীতির গতি কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে, পথচ্যুত হয়েছে। কীভাবে অর্থনীতিকে পথে ফিরিয়ে আনা যায়, সেই কৌশল ঠিক করবে টাস্কফোর্স। আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
টাস্কফোর্সের প্রধান বলেন, ‘আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে অর্থনীতিতে কী ধরনের ফলাফল পাওয়া যাবে, তাতে জোর দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি বিষয়ও থাকবে। তবে আমরা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বিকল্প তৈরি করছি না। আমরা টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করব। এতে নগর পরিবহন ও ডিজিটাল প্রশাসন—এসব বিষয় আসতে পারে।’
কে এ এস মুরশিদ বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদি কৌশলে অর্থায়নের বিষয়টি আসবে। বিদেশ থেকে সহযোগিতা পাব, আবার দেশের অভ্যন্তরে রাজস্ব আদায়ে জোর দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সরকারি অর্থ খরচে সুশাসনের অভাব রয়েছে এবং অপচয় হচ্ছে। এসব বিষয়ে আমরা নজর দেব। এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন কৌশল ঠিক করা হবে। আমরা জানি, কোথায় সমস্যা আছে। এখন সমাধান করা হবে।’
অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সঙ্গে টাস্কফোর্সের কাজের বিষয়টি সাংঘর্ষিক কি না, জানতে চাইলে কে এ এস মুরশিদ বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি সাম্প্রতিক অর্থনীতির প্রবণতা বিশ্লেষণ করবে। একটি বর্ণনা তৈরি করবে। আর আমাদের কাজ হবে, আমরা কোন পথে যাব এবং তা কীভাবে বাস্তবায়ন করব, সেটি ঠিক করা। আমরা একটি আশাব্যঞ্জক ও কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করব।’
১১ সেপ্টেম্বর এই টাস্কফোর্স গঠন করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। ১২ সদস্যবিশিষ্ট এই টাস্কফোর্সের সভাপতি নিয়োগ করা হয় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদকে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আখতার মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান আবদুর রাজ্জাক, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুশফিক মোবারক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মনজুর, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাশরুর এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. কাউসার আহাম্মদ।
বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কাজ নির্দিষ্ট করা ও সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠিত হয়। সাধারণত খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এটি গঠন করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করাই এর লক্ষ্য।