রাজধানীর বঙ্গবাজার ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদের আগে সব হারানো ব্যবসায়ীদের পরিবারগুলোতে ছিল না ঈদের আনন্দ।
রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হওয়া ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঈদের আগে খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ীভাবে ব্যবসার সুযোগ পেলেও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। আর ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট যখন পুড়ল, তখন ব্যবসায়ীদের ঈদের আগে নতুন করে শুরু করার সময় ছিল না। কোনোমতে ঈদ পার করে দিলেও নতুন করে ব্যবসা শুরু করা নিয়ে ঘোর অন্ধকারে ব্যবসায়ীরা। আর কর্মচারীরা রয়েছেন চাকরির অনিশ্চয়তায়।
আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার মার্কেটের আনাস প্যান্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম। অগ্নিকাণ্ডে তাঁদের পারিবারিক ৭ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ২টি গোডাউনও পুড়েছে। মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক রাতের ব্যবধানে ধনী থেকে নিঃস্ব হয়েছি। তাই এবারের ঈদের কোনো আমেজই ছিল না আমাদের পরিবারে। তারপরও ঈদের মধ্যে কর্মচারীদের সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা করেছি। ঈদের ছুটির কারণে চলতি সপ্তাহটিতে মার্কেট বন্ধ থাকবে। তারপর নতুন উদ্যমে আবার ব্যবসা শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।’
এক রাতের ব্যবধানে ধনী থেকে নিঃস্ব হয়েছি। তাই এবারের ঈদের কোনো আমেজই ছিল না আমাদের পরিবারে। তারপরও ঈদের মধ্যে কর্মচারীদের সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা করেছি।মনিরুল ইসলাম, স্বত্বাধিকারী, আনাস প্যান্ট হাউস, বঙ্গবাজার
ঈদের আগে আগুনে পুড়ে যাওয়া রাজধানীর দুই মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদে কর্মচারীদের বোনাস দিতে না পারলেও বেতন দিয়েছেন। তবে কেউ কেউ পুরো বেতন দিতে পারেননি, বেতনের একটি অংশ দিয়েছেন। বেতনের বকেয়া অর্থ ঈদের পর ব্যবসা চালু হলে ধীরে ধীরে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কর্মচারীরাও তা মেনে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ঈদের পর নতুন করে আবারও ব্যবসায় ফিরতে চান। ব্যবসা করেই ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা তাঁদের। তবে নতুন করে ব্যবসা শুরুর জন্য তাঁদের দরকার আর্থিক সহায়তা। কিন্তু এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো আর্থিক সহায়তা কারও কাছ থেকে পাননি। দুলাল আহমেদ খান জানান, এবারের ঈদটা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের ভালো কাটেনি। এ অবস্থায় আগামী সপ্তাহে ভাসমান দোকানপাটগুলো আবার খুললে তাতে হয়তো কিছুটা ব্যবসা করতে পারবেন। তাই ঈদের পর নতুন করে শুরুর অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বঙ্গবাজারের পাশাপাশি ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের আড়াই শর মতো দোকানও ঈদের আগে আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি সহায়তায় ঈদের আগে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেট এলাকায় খোলা আকাশের নিচে ব্যবসা শুরুর সুযোগ পেলেও নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সে সুযোগ হয়নি। ফলে ঈদের আগে তাঁদের ব্যবসা মার খেয়েছে। এখন তাঁরা মার্কেটের সংস্কারকাজসহ নতুন করে ব্যবসায় ফেরার কথা জানান।
ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের হাবিব ফ্যাশনের মালিক সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো কারও কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। মার্কেট সংস্কারের ব্যাপারেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারিনি। তাই ঈদের পর নতুন করে কবে আবার ব্যবসায় ফিরতে পারব, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছি। এমন এক পরিস্থিতিতে এবারের ঈদও কেটেছে হতাশা ও দুশ্চিন্তায়।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বঙ্গবাজারে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে ৩০৩ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে মালপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকার বেশি। আর মার্কেটগুলোর কাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
ঢাকা নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির তরফ থেকে বলা হয়েছে, নিউ সুপার মার্কেটে আগুনে পুড়েছে ২২৬টি দোকান। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার মালামাল।