চালের মজুত বাড়ানোর পাশাপাশি দাম সহনীয় রাখতে দ্রুততম সময়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারি পর্যায়ে আমদানির পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানি উৎসাহিত করা হবে। এ জন্য চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি তুলে নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
গত বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চাল আমদানি ও দেশের চালের মজুত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর। গণভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান এবং খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল খালেক অংশ নেন।
খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল আমাদের প্রধান খাদ্যপণ্য। বন্যায় উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য মজুত বৃদ্ধি করা দরকার। প্রয়োজনীয় সংগ্রহ ও দাম সহনীয় রাখার জন্য যা যা করার দরকার সবই এ সরকার করবে।’
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় চাল আমদানিতে নতুন উৎসদেশ খোঁজার পরামর্শ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে। এ ছাড়া চালের ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা যাতে না হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়ে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের
সঙ্গে আলোচনারও পরামর্শ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চালের বার্ষিক চাহিদা ৩ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩৫ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তর গত সোমবার এক চিঠি দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে ১০ লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। অর্থবছরের বাকি সময়ে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা কঠিন হতে পারে। তাই উন্মুক্ত দরপত্রের পাশাপাশি সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। শুধু তা–ই নয়, বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) সম্প্রতি চালের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের তুলনায় ভারত থেকে চাল আমদানিতে খরচ কম। মুনাফাসহ সব খরচ যোগ করার পর ভারতীয় চালের দাম পড়ে কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। আর থাইল্যান্ডের চালের দাম পড়ে ৯২ থেকে ৯৫ টাকা কেজি।
সরকারি হিসাবে, নিরাপত্তা মজুত হিসেবে ১১ লাখ টন চালের কথা বলা হয়ে থাকে। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য বাজেট বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। বাড়তি ৭ লাখ ৫০ হাজার টনের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ লাগবে।
অর্থ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চালের জন্য সরকার সব সময়ই উদারহস্ত। তবে টাকা থাকলেই চাল আমদানি করা যায় না, এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে সরকারের। আবার উৎসদেশও গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কোনো দেশ বাংলাদেশের প্রয়োজনের সময় চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।
চালে আমদানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর এবং আগাম কর মিলে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক-কর ছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০ অক্টোবর তিন ধরনের শুল্ক কমিয়েছে। তবে বিটিটিসির গত মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুল্ক কমানোর পরও আমদানিতে সাড়া কম। ভিয়েতনাম থেকে মাত্র ২৬ টন চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ২৭ অক্টোবর।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৯৫৭ টন চাল আমদানি হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯৩৪ দশমিক ১৮ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৮ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু ৪৮ টন চাল আমদানি হয়েছিল।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যনিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে এবং নিত্যপণ্যের মূল্য পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপই নিচ্ছি। চাল আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করেছি।’