ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর বাজারে হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। আমদানির বড় উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হবে। তবে ভারতের রপ্তানি বন্ধের জেরে বিকল্প বাজারগুলোতেও দাম বাড়তে শুরু করেছে।
ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকবে।
অবশ্য পেঁয়াজের মূল ফলন ওঠার আগে এখন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মুড়িকাটা নামে আগাম পেঁয়াজের ফলন উঠতে শুরু করেছে। যদিও এই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। উৎপাদনও খুব বেশি হয় না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, আগাম পেঁয়াজ বাজারজাত শুরু হয়েছে। কৃষকেরা যেহেতু ভালো দাম পাচ্ছেন, তাই নতুন পেঁয়াজ বাজারে দ্রুত আসবে। এতে সরবরাহ কিছুটা হলেও বাড়বে।
আগাম পেঁয়াজ বাজারজাত হলেও চাহিদা মেটাতে আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হবে। ভারতের পর বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে কাছের বিকল্প দেশ মিয়ানমার। দেশটি থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারজাত করা যায়। এর বাইরে রয়েছে পাকিস্তান, মিসর, চীন, নেদারল্যান্ডস। অবশ্য এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে শুধু সমুদ্রপথেই সময় লাগে ১৩ থেকে ৩০ দিন।
ভারতের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের জন্য মিয়ানমার সবচেয়ে সুবিধাজনক। তবে এই সুবিধা এখন পাওয়া যাবে না বলে ধারণা আমদানিকারকদের। কারণ, দেশটির রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষের কারণে গত ১৪ নভেম্বর থেকে ২১ দিন টেকনাফ স্থলবন্দরে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। ৫ ডিসেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে কিছু পণ্য আমদানি শুরু হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি।
জানতে চাইলে টেকনাফের আমদানিকারক ফারুক ট্রেডার্সের কর্ণধার ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারে রপ্তানিযোগ্য পেঁয়াজ রয়েছে। তবে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে অস্থিরতার জেরে দেশটির সরকার রপ্তানির অনুমতি দিচ্ছে না।
মিয়ানমার ছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে বিকল্প দেশ তুরস্ক, পাকিস্তান, চীন, মিসর ও নেদারল্যান্ডস। এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে সরবরাহকারী খুঁজে বের করা, এরপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমতি, ঋণপত্র খোলার মতো প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। ডলার-সংকটে ঋণপত্র খোলা নিয়ে এখন সংকট চলছে।
এদিকে ভারত গত ২৯ অক্টোবর প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেওয়ার পর বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। পরিমাণে বেশি না হলেও নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছিল চীন ও পাকিস্তান থেকে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম প্রথম আলোকে জানান, ২৬ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত চীন ও পাকিস্তান থেকে ৮৩০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে অনেক ব্যবসায়ী নতুন করে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন। এমনই একজন আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের রপ্তানি বন্ধের আগে চীন থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রতি টন পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়ত ২৮০ ডলার। গতকাল শনিবার এই পেঁয়াজের দাম চাচ্ছে ৩৮০ ডলার। বিকল্প দেশে পেঁয়াজের দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
চার বছর আগে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশের সংকট সামাল দিতে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছিল বড় চারটি শিল্প গ্রুপ। এই চার শিল্প গ্রুপ হলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআই, বিএসএম, এস আলম ও সিটি গ্রুপ। সেই সময় পেঁয়াজ আমদানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে থাকা বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা গেলে সবচেয়ে ভালো হতো। তাতে দ্রুততম সময়ে পেঁয়াজ আনা যেত। মিয়ানমার ছাড়াও চীন, পাকিস্তান, মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ আছে। পেঁয়াজ আমদানিতে যাতে দ্রুত ঋণপত্র খোলা যায়, সে জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।