চট্টগ্রাম নগরের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ব্যস্ততা বেড়েছে। পণ্য ওঠা–নামার কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। গতকাল দুপুরে।
চট্টগ্রাম নগরের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে ব্যস্ততা বেড়েছে। পণ্য ওঠা–নামার কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। গতকাল দুপুরে।

ব্যস্ততাও বাড়তে শুরু করেছে খাতুনগঞ্জে

চট্টগ্রামে কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ানোর পর দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে কেনাবেচার ব্যস্ততা বাড়তে শুরু করেছে। তবে ব্যাংক বন্ধ থাকায় অধিকাংশ পাইকারি ব্যবসায়ী আর্থিক লেনদেন করতে পারছেন না। ফলে এ বাজারে লেনদেন হচ্ছে হাতে গোনা। ব্যাংক বন্ধের কারণে এ বাজারের লেনদেন এখনো স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে পারছে না।  

দেশজুড়ে সহিংসতা বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কারফিউ জারির চতুর্থ দিনে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গতকাল খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, পণ্যবোঝাই ছোট ছোট ট্রাক ও ভ্যানের সংখ্যা বেড়েছে বাজারে। তবে বড় আকারের পণ্যবাহী ট্রাক এখনো কম। পণ্য সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও ক্রেতা কম।

স্বাভাবিক সময়ে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে। গত শুক্রবার কারফিউ জারির পর ট্রাকের সংখ্যা কমে যায়। বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ ছিল। তবে কারফিউর প্রথম তিন দিনের তুলনায় গতকাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে বেশি। ব্যবসায়ীরা জানান, নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার থেকে কিছু ক্রেতা পণ্য কিনতে পাইকারি এ বাজারে এসেছেন।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানোর পর আগের কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। তবে ক্রেতা নেই। বেচাবিক্রির আশায় ব্যবসায়ীরা দোকান খুললেও আশানুরূপ তা হয়নি।

লেনদেনে ভোগান্তি

দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও আছদগঞ্জ এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনের বড় অংশই হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। সাধারণ ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকায় এই বাজারে লেনদেন কমে গেছে। যেসব কেনাবেচা হচ্ছে, তা নগদ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই বাজারের লেনদেনে ব্যাংকনির্ভরতার কারণে বড় আকারের লেনদেন করা যাচ্ছে না। এ কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বেশি খুললেও বেচাবিক্রি কম। সরেজমিনেও এ চিত্র দেখা যায়। খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও আছদগঞ্জে অধিকাংশ দোকান খুলেছে। তবে ক্রেতা খুব কম। আশপাশের খুচরা বাজার থেকে কিছু ক্রেতা বাজারে এসেছেন। পণ্য কিনে তাঁরা রিকশায় করে গন্তব্যে নিয়ে যান।

চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, দোকানপাট খুললেও ব্যাংক বন্ধ। তাই নগদে কিছু লেনদেন হলেও বড় অঙ্কের পাইকারি বেচাকেনা নেই। কারফিউ শিথিলের পাশাপাশি ব্যাংকগুলো খুলে দিলে খাতুনগঞ্জের লেনদেন বাড়বে।

খুলেছে খুচরা বাজারও

কারফিউ শিথিলের সময় বৃদ্ধির কারণে নগরের খুচরা বাজারগুলো খুলেছে। পাইকারি বাজারের তুলনায় এসব বাজারে ক্রেতা তুলনামূলক বেশি। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় মানুষ এসব বাজারে এসেছেন কেনাকাটার জন্য। দোকানিরা জানান, কয়েক দিন দোকান বন্ধ ও ক্রেতা না থাকায় বিক্রি তেমন হয়নি। ফলে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের মতো পণ্যের মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকানিরা।

নগরের অন্যতম খুচরা বাজার বহদ্দারহাট, চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও পাহাড়তলী বাজার। এসব বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগ দোকানপাটই খুলেছে। কারফিউ শিথিল থাকায় দুপুরের দিকে ক্রেতাসংখ্যা বেশি ছিল। তাতে স্বাভাবিক সময়ের মতো না হলেও মোটামুটি বেচাবিক্রি হয়েছে। এসব বাজারের দোকানিরা বলছেন, কারফিউ শিথিলের সময় আরও বাড়ানো হলে ধীরে ধীরে ব্যবসা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।  

নগরীর খাজা রোড এলাকা থেকে বহদ্দারহাট বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মুদিদোকানি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, এলাকায় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। তাই পেঁয়াজ কেনার জন্য এসেছেন তিনি। এখনো মানুষ বড় বাজারগুলোতে যেতে কিছুটা আতঙ্কে রয়েছেন। এ কারণে এলাকার দোকান থেকেই কেনাকাটা করছেন। তাতে বিক্রি বেড়েছে স্থানীয় দোকানে।  

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সহিংসতার ঘটনা ও কারফিউর কারণে যান চলাচল বন্ধের কারণে গত কয়েক দিনে গাড়িভাড়া বেড়ে গেছে। এ কারণে আমাদেরও পণ্য পরিবহন খরচ বেড়েছে।’ তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাজারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।