পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীরা সরকারকে সহযোগিতা করেননি। বরং এ সময়ে তাঁরা পণ্য হাতবদলের মাধ্যমে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছেন। এর দায় ব্যবসায়ীদের নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
সরকারি এই সংস্থার প্রধান বলেন, সরকার পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতির পর্যালোচনা করছে। অভিযোগের প্রমাণ পেলে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টানা না গেলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করেন তিনি।
আজ বুধবার রাজধানীতে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পেঁয়াজের ব্যবসায়ী ও বাজারসংশ্লিষ্টদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। ভারতের কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হওয়ার পর এই সভার আয়োজন করা হয়।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘খুদে বার্তার মধ্যে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে এখন পর্যন্ত যেটা দেখা যাচ্ছে, তা হলো হাতবদলের খেলায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ত্রুটিযুক্ত বিপণনব্যবস্থা ও হাতবদলের খেলা বন্ধ করা না গেলে বাজারে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘কৃষক তার পণ্যের দাম পায় না। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা ঠিকই অনেক বেশি লাভ করেন। যিনি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত, তিনি কম দাম পাচ্ছেন।
আবার যিনি ভোক্তা তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মাঝখান দিয়ে লুটপাট করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।’
এ পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের সংগঠিত হতে হবে উল্লেখ করে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এটা বলতে পারি না যে আপনি কম খান। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে বাজার ঠিক করতে হলে ভোক্তাদের উচিত কেনাকাটা কমিয়ে দেওয়া। তাহলে কেউ এক হাজার টাকায় কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে পারবে না। পেঁয়াজের দামও ২০০ টাকায় উঠবে না। বেচাকেনা কমে গেলে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে বসে থাকবে। তখন দাম এমনিতেই কমবে। গরুর মাংস তার বড় প্রমাণ। মানুষ যখন মাংস খাওয়া কমিয়ে দিল, তখন ঠিকই ব্যবসায়ীরা ৬০০ বা ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছে।’
শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা সরকারকে সহযোগিতা করেননি উল্লেখ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরকার তথ্য পায়নি। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর আমাদের কাছে তথ্য আসতে দেরি হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ঠিকই জেনে গেছেন। শুক্রবার ছুটির দিন, তারপরও সবাই দাম বাড়ানোর মহোৎসবে মেতে ওঠে। গুদাম পেঁয়াজে ভরা। কিন্তু বলা হয়েছে পেঁয়াজ নেই। শুধু আইন করে এটা বন্ধ করা সম্ভব না। কিছু নৈতিক অনুশাসন যদি মেনে না চলা হয়, তা হলে এ অবস্থার উন্নতি হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার জন্য খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দোষারোপ করেন। সভায় উপস্থিত পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, তাঁরা ১১০ টাকা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করলেও খুচরা ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে রাখছেন। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ যে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তবে এখন পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আরও বেশি পরিমাণে আসতে শুরু করলে দামও দ্রুত কমে আসবে বলে মনে করেন তাঁরা।
সভায় বক্তারা বলেন, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে রীতিমতো লুটপাট করছেন। সরকার চেষ্টা করলেও ব্যবসায়ী নেতারা সব সময় সহযোগিতা করছেন না। বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, এ জন্য ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আরও ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন সংশ্লিষ্টরা।
পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কয়েকটি সুপারশপের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।