আয়কর রিটার্ন
আয়কর রিটার্ন

দুই মাসে ১ লাখ ৬৭ হাজার করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিয়েছেন

অনলাইনে বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে করদাতাদের। দুই মাসে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৫ জন করদাতা অনলাইনে বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এখন প্রতি কর্মদিবসে গড়ে আট হাজার ই-রিটার্ন জমা পড়ছে। অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার এই সিস্টেম বা ব্যবস্থা চালুর সময় দৈনিক গড়ে মাত্র ৫০০ রিটার্ন জমা পড়ত।

এনবিআরের আয়কর বিভাগ গত ৯ সেপ্টেম্বর অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার সিস্টেম চালু করে। এনবিআর আশা করছে, চলতি নভেম্বর মাসের শেষদিকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার রিটার্ন জমা পড়বে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। নভেম্বর মাসজুড়ে করসেবা চালু উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সংস্থাটির আয়কর বিভাগের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল থেকে প্রতিটি কর অঞ্চলে সেবা বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এসব বুথ থেকে সারা দেশের ৮৬৯টি কর সার্কেলের সব করদাতা যেকোনো ধরনের করসেবা নিতে পারবেন। সেখানে রিটার্ন জমা নেওয়ার পাশাপাশি রিটার্ন ফরম পূরণেও সহায়তা দেওয়া হবে। রিটার্ন জমা দেওয়ার পর করদাতারা তাৎক্ষণিকভাবে রিটার্ন জমার প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পাবেন। ই-রিটার্ন জমা দিতে আগ্রহী করদাতাদের জন্যও আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে ই-পেমেন্টের ব্যবস্থাও আছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এসব সেবা মিলবে।

এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানেও করসেবা বুথ বসানো হবে। যেমন ঢাকায় ৩-১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সচিবালয়ে; ১৮-১৯ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২৪-২৮ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে করসেবা বুথ বসানো হবে।

বর্তমানে দেশে এক কোটি পাঁচ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। প্রতিবছর গড়ে ৪০ লাখের মতো টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দেন।

৩০ নভেম্বরের পর রিটার্ন জমার সময় বাড়বে কি না, জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা এখনো চিন্তা করিনি। গত জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থানের জন্য রিটার্ন জমার আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। এ নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করব। সময় বাড়বে কি না, তা নিয়ে এখনো আগাম বলার কিছু নেই।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করজাল যত বড় হবে, তত ভালো। যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁদের ওপর পীড়াপীড়ি বন্ধ হবে।

আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা অনলাইনে রিটার্ন দেওয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছি। এতে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে করদাতাদের দেখা হবে না। একটা সময় আসবে যখন আমরা সনাতনী পদ্ধতিতে আর রিটার্ন নেব না। ৬ নভেম্বর থেকে এনবিআর অনলাইন রিটার্নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।’ তিনি জানান, অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে করদাতার তথ্য সুরক্ষিত থাকবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে রিটার্ন তৈরি ও জমা দেওয়া যাবে আবার কর পরিশোধও করা যাবে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেকোনো করদাতা রিটার্ন জমার পাশাপাশি কর পরিশোধ করতে পারবেন। এ ছাড়া একই অনলাইন ব্যবস্থা থেকে দাখিল করা রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারবেন করদাতা।

কয়েকটি খাতের পেশাজীবীদের অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেমন চার সিটি করপোরেশনে অবস্থিত আয়কর সার্কেলের অধিভুক্ত সরকারি কর্মচারী ও সারা দেশের তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ মোবাইল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি, ম্যারিকো বাংলাদেশ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, বাটা শু কোম্পানি (বাংলাদেশ) ও নেসলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।