২০২২–২৩ অর্থবছর 

স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি কমেছে 

গত এক বছরে স্থলপথে ভারত থেকে প্রায় ২৬ লাখ টন কম মাল আমদানি হয়েছে। তবে রপ্তানি আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। 

প্রতিবেশী ভারত থেকে স্থলপথে আমদানি কমে গেছে। গত এক বছরে দেশটি থেকে স্থলপথে প্রায় ২৬ লাখ টন কম মাল আমদানি হয়েছে। দেশে ডলারের–সংকটই মূলত আমদানি কমার মূল কারণ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত ধরে রাখতে সরকার আমদানির লাগাম টানাতেও প্রভাব পড়েছে। দুইয়ে মিলে ভারত থেকে স্থলপথে আমদানি কমেছে। তবে রপ্তানির পরিমাণ আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সদ্যসমাপ্ত ২০২২–২৩ অর্থবছরে দেশের ১৫টি স্থলবন্দর দিয়ে ১ কোটি ৭৪ লাখ ১০ হাজার ৪৮২ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আমদানি করা। কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়েও মিয়ানমার থেকে কিছু পণ্য আমদানি হয়। আগের অর্থবছরে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে আমদানি হয়েছিল ২ কোটি ১৩ হাজার
১৪৩ টন পণ্য। 

তবে স্থলবন্দর দিয়ে দেশ থেকে রপ্তানি বেড়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১৩ লাখ ১ হাজার ৫৬০ টন পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে। এর আগের বছর রপ্তানি হয়েছিল ১২ লাখ ৯৩ হাজার টন।

কোন স্থলবন্দর দিয়ে কত পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে সেই তথ্যউপাত্ত এখনো চূড়ান্ত করেনি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

ডলার–সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে গিয়ে ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। তাই আমদানি কমেছে। আবার ব্যবসা-বাণিজ্যও ভালো যাচ্ছে না।
মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ

ভারত থেকে স্থলপথে মূলত মূলধনি যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী পণ্য, ভোগ্যপণ্য, সুতা, তুলা, কেমিক্যাল যন্ত্রপাতিই বেশি আসে। এ ছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, আলু, হলুদ, মরিচ, কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানি হয়।

এ বিষয়ে নিট পোশাকমালিকদের সংগঠন বিকিএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, শুধু স্থলপথে নয়. সমুদ্র এবং আকাশপথেও আমদানি কমেছে। ডলার–সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে গিয়ে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না। তাই আমদানি কমেছে। আবার ব্যবসা-বাণিজ্যও ভালো যাচ্ছে না। 

মোহাম্মদ হাতেম আরও জানান, নিট পোশাক খাতের জন্য ভারত থেকে সুতা, ডাইস কেমিক্যাল ও যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়। তবে গত এক বছরে দেশটি থেকে সুতা আমদানি প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের বাজার থেকে প্রতি কেজি ভারতীয় সুতার দাম ৩০-৫০ সেন্ট পার্থক্য হলেই আমদানি করা হয়। এই মুহূর্তে দেশি সুতা ও ভারতীয় সুতার মধ্যে কেজিতে দামের পার্থক্য ৫-১০ সেন্ট। তাই স্থানীয় বাজার থেকেই সুতা কিনছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। এ ছাড়া বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয়াদেশও কমেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

কোভিডের পর আবার কমল

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় অর্থবছরের মধ্যে কোভিড শুরুর বছরে স্থলপথে আমদানি কমে। তখন লকডাউন তথা বিধিনিষেধের কারণে কয়েক মাস ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা, অফিস-আদালত পুরোদমে চলেনি। ফলে আমদানিও কমে যায়। 

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পর কোভিডের বছর ছাড়া প্রতিবারই দুই কোটি টনের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে অর্থাৎ কোভিডের বছরে আমদানি কমে ১ কোটি ৪১ হাজার টনে নেমে আসে। পরের দুই অর্থবছরে আমদানি আবারও দুই কোটি টনে ওঠে। কিন্তু সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে তা কমে ১ কোটি ৭৪ লাখ টনে নেমে যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ডলার–সংকটের কারণে ব্যবসায়ীদের এলসি খোলায় সমস্যা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে আমদানিতে। ফলে স্থলপথে বিশেষ করে ভারত থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ কমেছে। 

কেন কমল আমদানি

২০২২ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে দেশে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। ৮৬ টাকার ডলার এখন প্রায় ১০৯ টাকা। এক বছরে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশের মতো। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে রিজার্ভে টান পড়ে। তাই বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করাসহ এলসির মার্জিন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব কারণে আমদানি কমেছে। 

এদিকে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ২৯ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া মধ্যবর্তী পণ্যে ২২ শতাংশ ও ভোগ্যপণ্যে আমদানি ১০ শতাংশের মতো কমেছে। 

দেশের ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে বর্তমানে ১৫টি কার্যকর আছে। এর মধ্যে অন্যতম স্থলবন্দর হলো বেনাপোল, বুড়িমারী, তামাবিল, ভোমরা, সোনাহাট, আখাউড়া, সোনামসজিদ, হিলি ও বাংলাবান্ধা। স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গেই প্রায় শতভাগ বাণিজ্য হয়ে থাকে। মিয়ানমারের সঙ্গে হয় ১ শতাংশের কম। ভুটান থেকেও কিছু পণ্য আসে।

সার্বিকভাবে ভারত হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানি উৎস।