হিনডেনবার্গ প্রতিবেদনের রেশ কাটতে না কাটতেই আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এবার নতুন অভিযোগ করল উইকিপিডিয়া। তাদের অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠী এক দশকের বেশি সময় ধরে তথ্যে কারচুপি করছে। খবর ইকোনমিক টাইমসের।
বিষয়টি হলো আদানি গোষ্ঠীর কর্মীসহ বেশ কিছু ব্যক্তি গৌতম আদানি, তাঁর পরিবারের সদস্য ও কোম্পানি–বিষয়ক তথ্য ওয়েবসাইটে বদলে দিয়েছেন—উইকিপিডিয়া এমন অভিযোগ তুলেছে। যেকোনো বিষয়ে উইকিপিডিয়ার তথ্য যে কেউ বদলে দিতে পারেন। অর্থ দিয়ে সেই সুযোগই নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এ নিয়ে মন্তব্য করেনি আদানি গোষ্ঠী।
উইকিপিডিয়ার দাবি, ২০০৭ সালে আদানি গোষ্ঠী ও এর কর্মকর্তাদের নিয়ে লেখালিখি শুরু হয় তাদের সাইটে। কিন্তু ভুয়া নামে আদানি, তাঁর স্ত্রী প্রীতি, ছেলে করণ, ভাতিজা প্রণব ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্য পাল্টেছেন—এমন কয়েকজন ব্যক্তি ধরা পড়েন।
সমাজকল্যাণ, স্বার্থের সংঘাত, করবিষয়ক সতর্কতাসংক্রান্ত তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে বলে উইকিপিডিয়ার অভিযোগ। এমনকি একজন সম্পাদক নতুন করে আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কে নিবন্ধ লিখেছেন। কোনো ক্ষেত্রে এক ব্যক্তিই একাধিক নিবন্ধে সায় দিয়েছেন। কেউ উইকিপিডিয়াকে এড়ানোর উপায় বার করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইতিমধ্যেই শেয়ারদরে কারচুপি নিয়ে হিনডেনবার্গের রিপোর্ট ঘিরে চাপে রয়েছে আদানিরা। এই অভিযোগ তাদের আরও অস্বস্তিতে ফেলবে।
উইকিপিডিয়া পরিচালিত সাইন পোস্টে লিখিত এক নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠী ও তাঁর পরিবারসম্পর্কিত ৯টি নিবন্ধ সম্পাদনা করেছেন ৪০ জন বেতনধারী ব্যক্তি (সক পাপেট), যাঁদের পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময় উইকিপিডিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এঁদের অনেকেই একাধিক নিবন্ধ সম্পাদনা করেছেন। অনেকে আদানি গোষ্ঠী ও তাঁর পরিবার সম্পর্কে পক্ষপাতমূলক তথ্য দিয়েছেন। এমনকি একজন বেতনভুক্ত সম্পাদক কোম্পানির আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে আদানি গোষ্ঠীসংক্রান্ত নিবন্ধ পুরোপুরি পুনর্লিখন করেছেন।
আর ২৫টি ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে গৌতম আদানিসংক্রান্ত উইকিপিডিয়ার নিবন্ধ সম্পাদনা করা হয়েছে। আদানি গোষ্ঠীসংক্রান্ত নিবন্ধ সম্পাদনা করা হয়েছে ২২টি ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে।
উইকিপিডিয়ার এই দাবিতে হিনডেনবার্গ রিসার্চের গলা আরও উঁচু হয়েছে। কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা নেইট অ্যানডারসন বলেছেন, সাইন পোস্টের এই নিবন্ধ থেকে বোঝা যাচ্ছে, আদানি গোষ্ঠী তথ্য জালিয়াতিও করেছে।
গত ২৪ জানুয়ারি মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর আদানি গোষ্ঠীর সাজানো বাগানে রীতিমতো ঝড় বয়ে গেছে। এই ধাক্কায় আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন কমেছে ১১ লাখ কোটি রুপি। গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্যও অনেক কমেছে। ধনীদের তালিকায় তৃতীয় স্থান থেকে তিনি ২৬তম স্থানে নেমে এসেছেন। সম্পদমূল্য ১১ হাজার ৯০০ কোটি থেকে নেমে এসেছে ৪ হাজার ৪২০ কোটি ডলারে। হিনডেনবার্গের অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতি করে শেয়ারের মূল্য বাড়িয়েছে।
এ দিকে আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত কী অবস্থায় রয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছে বিরোধী দলগুলো। গতকাল মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আদানি নিয়ে ‘নীরবতা’ ভাঙার অনুরোধ জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। তাঁর অভিযোগ, রাশিয়ায় তেল কোম্পানির অংশীদারি কিনতে বাড়তি অর্থ দিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। সেই বিদেশি সংস্থা রাজনৈতিকভাবে যুক্ত এক বেসরকারি ভারতীয় গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করেছে। ঠিক এভাবেই ‘দেশের টাকা চুরির’ চক্র কাজ করছে।