আইএমএফের সঙ্গে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচিটি তো সরকার এমনি এমনি নিচ্ছে না। সরকারের যে জরুরি ডলারের দরকার, তা ঋণ চাওয়ার চিঠিতেই বলা আছে। ভালো যে আইএমএফকেই সরকার বেছে নিয়েছে। যতটুকু জানা গেছে, ব্যাংকসহ রাজস্ব, মুদ্রা বিনিময় হার ও জ্বালানি—এসব খাতে সংস্কারের কথা বলবে আইএমএফ।
একটি একটি করে যদি বলি, দেশের ব্যাংক খাতে কোনো সংস্কারই হয়নি। কর্মসূচিটি যেহেতু সাড়ে তিন বছরের, ফলে সময় পাবে সরকার। ধাপে ধাপে এগোতেও পারবে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার শর্তের কথা শোনা যাচ্ছে। খেলাপি ঋণের হার কমাতে তো হবেই। পুরো ব্যাংক খাতেরই আমূল সংস্কার দরকার। আইএমএফের দেওয়া শর্তের মধ্যে এ সংস্কারের কথা থাকলেই ভালো।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, রাজস্ব-জিডিপির নিম্নতম হার। যখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠতে যাচ্ছি আমরা, তখনো আমাদের এ হার ৯ বা ১০ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্ভাবন নেই, মাথাব্যথাও নেই। নতুন ভ্যাট আইন সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত ভালোভাবে করে যেতে পারলেন না। বর্তমান অর্থমন্ত্রীও একে প্রায় ‘ইউজলেস’ করে ছেড়েছেন। রাজস্ব-জিডিপির হারটা বাড়বে কীভাবে? যথেষ্ট পরিমাণ ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) কেনার কথা কেবল শোনাই যাচ্ছে।
তৃণমূল পর্যায়ে কর কার্যালয় স্থাপনের কাজটিও যদি আইএমএফের শর্তের কারণে হয়, ভালো হবে। এরপর থাকল জ্বালানি খাত। এটা বাজারভিত্তিক হওয়া দরকার।
এখন অবশ্য বাজারের কাছাকাছিই আছে। ফলে সরকার তা করে ফেললেই পারে। সরকার সম্প্রতি জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। অনেকে আইএমএফের দোষ দিচ্ছে আন্দাজে। টাকা ছাপিয়ে আর কত দিন! গ্যাসের দাম বেশি না বাড়িয়ে কি সরকার ভালো করেছে? আমার জবাব, ‘না’। মোটকথা, তিনটা খাতে সরকারকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের পক্ষেই থাকছে আইএমএফের শর্তগুলো। সরকার কাজগুলো ঠিকঠাক করবে কি না, সেটাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন।
আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)