দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২০ পেয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সানাউল্লাহ সাকিব। ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে নিয়ে ‘৩৫০০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য তিনি এই পুরস্কার পান। ২০২০ সালের প্রিন্ট ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পান তিনি।
আজ সোমবার দুদক আয়োজিত অনুষ্ঠানে মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২০ ও ২০২১–এ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এতে দুই বছরের জন্য প্রিন্ট, অনলাইন ও টেলিভিশনের ১২ সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হয়। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।
২০২০ সালের জন্য প্রিন্ট ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় পুরস্কার পান যুগান্তরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মিজান চৌধুরী, তৃতীয় পুরস্কার পান কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেল। একই বছরের ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পান এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার মাহবুব কবির চপল, দ্বিতীয় পুরস্কার পান মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি কাওসার সোহেলী ও তৃতীয় পুরস্কার পান ডিবিসি নিউজের বিশেষ প্রতিনিধি আদিত্য আরাফাত।
২০২১ সালের জন্য প্রিন্ট ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পান ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আদনান রহমান, দ্বিতীয় পুরস্কার পান আমাদের সময়ের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জিয়াদুল ইসলাম, তৃতীয় পুরস্কার পান জাগো নিউজের স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী। একই বছরের ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পান ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবদুল্লাহ আল রাফি, দ্বিতীয় পুরস্কার পান মাছরাঙা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন ও তৃতীয় পুরস্কার পান মাছরাঙা টেলিভিশনের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি নূর সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে যে দুর্নীতি হয়, সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতির সব পয়েন্ট ছেড়ে দিয়ে বসে আছে; আর বলছে, দুর্নীতি দমন কমিশন কিছুই করছে না। এ বিষয়টি আমাদের চিন্তা করা প্রয়োজন।’
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘যেখানে যত বেশি প্রভাবশালী শ্রেণির ক্ষমতার চর্চা থাকে, সেখানে দুর্নীতিও বেশি হয়। এই প্রভাবশালী শ্রেণির লোকেরা মেধাবী লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান, যাতে দুর্নীতির সংবাদ তাঁরা প্রকাশ না করেন। দুঃখজনক বিষয় হলো, এ বিষয়টা আগে ছিল না, এখন বেড়েছে।’
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে দুর্নীতি হয়, সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়দায়িত্ব রয়েছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘ধরলাম, একটা প্রতিষ্ঠানের মধ্যম সারির একজন কর্মকর্তা দুর্নীতি করল। কিন্তু তার কাজ তত্ত্বাবধান করার কি কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিল না? দুর্নীতি দমন কমিশন পর্যন্ত কেন অভিযোগ নিয়ে আসতে হবে। তারা নিজেরাই কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অথচ সবাই ছেড়ে দিয়ে বসে আছে, দুর্নীতি দমন কমিশন একা কী করে তা দেখার জন্য।’
দুদককে একটি ব্যারাজ বা বাঁধের সঙ্গে তুলনা করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘উজানের সব বাঁধ যদি ছেড়ে দিয়ে রাখেন, তাহলে বাঁধ তো পানির স্রোতে উড়ে চলে যাবে। দুর্নীতির অপরাধ প্রমাণ করা অত্যন্ত কঠিন। তবে অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের জনশ্রুতি আছে। এখন বিভিন্ন অফিসে-দপ্তরে থেকে দুর্নীতিবাজদের ব্যবসা প্রসারে যদি আমরা কাজ করি, তাহলে আমরা দুর্নীতিবাজদের সহযোগী কি না, সেটা ভেবে দেখা প্রয়োজন।’
মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি দমন করা খুবই কষ্টকর। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, প্রতিরোধ তৈরি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক, কমিশনার (অনুসন্ধান) আছিয়া খাতুন, দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন, জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান মনজুরুল আহসান বুলবুল, সদস্য জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাইনুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।