তেল–চিনির দাম কমল, ডিম চড়া

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার ফলে সয়াবিন ও চিনির দাম ৫ টাকা কমানো হয়েছে। তবে ডিমের বাজার অস্থির।

বোতলজাত ও খোলা উভয় ধরনের সয়াবিন তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে কেজিপ্রতি খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দামও কমছে পাঁচ টাকা। গতকাল রোববার পৃথক দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উভয় পণ্যের মিলমালিকদের সংগঠন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। দুটি পণ্যের নতুন দামই আজ সোমবার থেকে কার্যকর হবে। বাজারে এখনো চড়া ডিমের দাম। ডজনপ্রতি ডিমের দাম উঠেছে ১৭০ টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৭৯ টাকা থেকে ৫ টাকা কমে এখন বিক্রি হবে ১৭৪ টাকায়।

রাজধানীতে ডিমের পাইকারি দাম কিছুটা কমেছে। তবে খুচরা বাজারে ডিম কিনতে গেলে চড়া দাম দিতে হচ্ছে। ডজনপ্রতি ডিমের দাম ১৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। চড়া দামের কারণে ডিমের বেচাকেনা ইতিমধ্যে কিছুটা কমেছে। তবে সরবরাহ বাড়লে ডিমের দাম আস্তে আস্তে কিছুটা কমবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।

খোলা সয়াবিনের দামও লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা কমবে। সেই হিসাবে খোলা সয়াবিনের নতুন দাম হবে লিটারপ্রতি ১৫৪ টাকা। এক লিটার সয়াবিনের দাম ৫ টাকা কমলেও ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম কমবে ২৩ টাকা। তাতে বর্তমান দাম ৮৭৩ থেকে কমে দাঁড়াবে ৮৫০ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার ফলে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিলমালিকেরা। তবে অতীতে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর সঙ্গে পাম তেলের দামও কমানো হতো। এবার পাম তেলের দাম কমায়নি মিলমালিকদের এই সংগঠন। খোলা পাম তেলের লিটারপ্রতি দাম থাকছে ১২৮ টাকা। লিটারপ্রতি বোতলজাত পাম তেলের দামও ১৪৮ টাকায় অপরিবর্তিত থাকবে।

পাইকারিতে বাজার একটু করে নামছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী তিন বা চার দিনের মধ্যে দাম আরও কিছুটা কমে আসবে।
বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী

অপর দিকে চিনিকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনও খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অপরিশোধিত চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর ও স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাজারে প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির দাম ১৩৫ টাকা থেকে ৫ টাকা কমিয়ে ১৩০ টাকা করা হলো। আর একই হারে প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৪০ টাকা থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১৩৫ টাকা।

তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাজারে যত দ্রুত কার্যকর হয়, দাম কমানোর ক্ষেত্রে তা হয় না।

এদিকে রাজধানীতে ডিমের পাইকারি দাম কিছুটা কমেছে। তবে খুচরা বাজারে ডিম কিনতে গেলে চড়া দাম দিতে হচ্ছে। ডজনপ্রতি ডিমের দাম ১৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। চড়া দামের কারণে ডিমের বেচাকেনা ইতিমধ্যে কিছুটা কমেছে। তবে সরবরাহ বাড়লে ডিমের দাম আস্তে আস্তে কিছুটা কমবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।

গতকাল ডিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুদিদোকান থেকে ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম কিনতে গেলে ডজনপ্রতি দাম পড়ছে ১৭০ টাকা। বড় বাজার থেকে কিনলেও ১৬৫ টাকার নিচে কোথাও ডিম কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত পরশু তাঁরা বাদামি রঙের প্রতি শতক ডিম ১ হাজার ৩০০ টাকার ওপরে কেনেন। গতকাল সেই ডিম তাঁরা কিনেছেন ১ হাজার ২৭০ থেকে ১ হাজার ২৯০ টাকায়। তাতে পাইকারিতে ডজনপ্রতি দাম পড়ছে ১৫২ থেকে ১৫৫ টাকার মধ্যে। দুই দিন আগেও পাইকারিতে যা ১৬০ টাকার বেশি ছিল। ডিমের দাম প্রতি শতকে দুই দিনের ব্যবধানে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমেছে। অথচ খুচরা বাজারে এর বিশেষ কোনো প্রভাব নেই।

ডিমের দাম কিছুটা কমতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারিতে বাজার একটু করে নামছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী তিন বা চার দিনের মধ্যে দাম আরও কিছুটা কমে আসবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ২ হাজার ৩৩৮ কোটি। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। দেশে উৎপাদিত এই ডিম দিয়েই চাহিদা মেটে। খাওয়ার পাশাপাশি ডিমের একটি বড় অংশ ব্যবহার করে বাচ্চাও ফোটানো হয়। বাজারে সাধারণ ডিমের পাশাপাশি পুষ্টিসমৃদ্ধ নানা ডিমও আছে। এসব ডিমের দাম আরেকটু বেশি।