ঢাকায় পুরোনো আসবাবের ছয়টি বড় বাজারে ২৫০টির বেশি দোকান আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় আরও শতাধিক দোকান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
সবার পক্ষে নতুন আসবাব কেনা বা বানানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। সে জন্য অনেকেই সাধ্য অনুযায়ী পুরোনো আসবাব কেনেন। বদৌলতে এ ধরনের আসবাবের চাহিদা বাড়ছে। এই চাহিদা পূরণে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি স্থানে পুরোনো আসবাব কেনাবেচার বড় ছয়টি বাজার রয়েছে।
এগুলো হচ্ছে বাড্ডা নতুন বাজার এলাকার বিসমিল্লাহ ফার্নিচার মার্কেট, খিলগাঁও রেলগেট, সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির পূর্ব পাশ, মোহাম্মদপুরের টাউন হল মার্কেট, মিরবাগ ও পান্থপথ মসজিদের পূর্ব পাশ। এসব বাজারে পুরোনো আসবাবের ২৫০টির বেশি দোকান আছে।
মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকের জনতা হাউজিং, উত্তরার মাসকট প্লাজার আশপাশ, কচুক্ষেত এবং মিরপুর ১, ২ ও ১৪ নম্বরসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলি মিলিয়ে আরও শতাধিক দোকান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
বেশ কয়েকজন পুরোনো আসবাব ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় বছরে কমবেশি ৫০০ কোটি টাকার আসবাব কেনাবেচা হয়ে থাকে।
‘একটু ঘুরেফিরে দেখলে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে অল্প দামে পুরোনো ভালো আসবাব পাওয়া যায়। বাড্ডার নতুন বাজার বিসমিল্লাহ মার্কেট থেকে ২৫ হাজার টাকায় ছয় চেয়ারসহ ডাইনিং-টেবিল কিনেছি।’অরিত্রি আহমেদ, ঢাকার বনানীর বাসিন্দা
মিলছে নানা নকশা ও কাঠের আসবাব
ঢাকায় পুরোনো আসবাবের দোকানগুলোতে বাসাবাড়ির পাশাপাশি অফিস ব্যবহার্য বিভিন্ন ধরনের আসবাব পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বাসাবাড়িতে ব্যবহার্য খাট, আলমারি, ওয়ার্ডরোব, ডাইনিং ও ড্রেসিং টেবিল, সোফা, শোকেস, পড়ার টেবিল, টিভি ট্রলি, কফি টেবিল, ডিভান ইত্যাদি। অফিস আসবাবের মধ্যে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের চেয়ার, ওয়ার্কস্টেশন টেবিল, এক্সিকিউটিভ টেবিল, বস টেবিলসহ নানা ধরনের আসবাব। নকশা, মান ও কাঠভেদে আসবাবের দাম বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
দরদাম কেমন
পুরোনো আসবাবের নির্দিষ্ট কোনো দাম নেই। সে জন্য সর্বত্র দামাদামি করেই বেচাকেনা হয়। সেগুনবাগিচার ব্যবসায়ী মালেক সরদার প্রথম আলোকে জানান, কাঠের ধরন ও মানভেদে তাঁরা প্রতিটি খাট ৫ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা, আলমারি ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা, ড্রেসিং টেবিল ১০ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা, সোফা ১৬ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া অফিসের প্রতিটি চেয়ার ২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা, টেবিল ৫ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীদের মতে, পুরোনো আসবাবের দাম সাধারণত নতুন আসবাবের চেয়ে ৫০ শতাংশ বা তারও কমে পাওয়া যায়। তবে বিদেশি দূতাবাস, উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ব্যবহৃত আসবাবের দাম কিছুটা বেশি, যা কয়েক লাখ টাকাও হতে পারে।
কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখবেন
পুরোনো আসবাব কেনার ক্ষেত্রে এর মান ও কাঠ দেখে কিনতে হয়। বর্তমানে কড়ই, মেহগনি, সেগুন, আকাশি, বার্মাটিক ও ইপিলইপিল কাঠ এবং প্লাইউড দিয়ে তৈরি পুরোনো আসবাব পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীদের মতে, সেগুন কাঠের আসবাবের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। পান্থপথের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কাঠের আসবাব কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের উচিত কাঠের মান, ফিনিশিং, ঘুণ, বার্নিশ ও কত দিন ব্যবহৃত, এসব দেখা উচিত।
কখন ও কোনটির চাহিদা বেশি
বিক্রেতারা জানান, মূলত বছরের শেষ ও শুরুর দিকেই পুরোনো আসবাব বেশি বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘শীতকালে আসবাবের চাহিদা বেশি থাকে। কারণ, আমাদের দেশে এই সময়ে বিয়েসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান বেশি থাকে। ফলে চাহিদা বাড়ে তখন। আর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় খাট ও ডাইনিং টেবিল।’
কারা পুরোনো আসবাব কেনেন
অনেকেই মনে করেন, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরাই পুরোনো আসবাবের প্রধান ক্রেতা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব শ্রেণির ক্রেতাই এ ধরনের আসবাব কেনেন। নতুন বাজারের ব্যবসায়ী মো. সুমন বলেন, অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকও আসেন। সব ধরনের মানুষই পুরোনো আসবাব কেনেন।
অফিসের পুরোনো আসবাব বিক্রেতা মো. বাশার জানান, তাঁদের প্রধান ক্রেতা বিভিন্ন স্টার্ট আপ ও কোম্পানি।
সম্প্রতি সেগুনবাগিচায় মোহাম্মাদ জুনায়েদ নামের এক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে জানান, আগামী মাসে তাঁরা টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাত্রীবাহী লঞ্চ পরিষেবা চালু করবেন। এ জন্য ৫০০টি চেয়ার কিনতে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের চেয়ে ঢাকায় পুরোনো আসবাবের দাম কম বলে শুনেছি। তাই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আসবাবের দোকান ঘুরে দেখছি।’
ব্যবসায়ীরা যেভাবে সংগ্রহ করেন
ব্যবসায়ীরা বাসাবাড়িতে গিয়ে পুরোনো আসবাব কিনে আনেন। অনেকেই আবার ডেমরা ও বাড্ডার কিছু বিক্রয়কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন কোম্পানির অবিক্রীত নতুন আসবাব নিলামের মাধ্যমে কিনে আনেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দূতাবাস ও অফিসের পুরোনো আসবাব নিলামের মাধ্যমে কিনে থাকেন বিক্রেতারা।
অনলাইনেও বেচাকেনা হয়
এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তাই ক্রেতারা চাইলে বিক্রয় ডট কমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপ বা পেজ থেকেও পুরোনো আসবাব কিনতে পারেন। অনেক ব্যবসায়ী ফেসবুক পেজ খুলে পুরোনো আসবাব বিক্রি করেন। ওই পেজে তাঁরা বিভিন্ন আসবাবের ছবি আপলোড করে রাখেন। তা দেখে ক্রেতারা অনলাইনে ক্রয়াদেশ দিতে পারেন।
ঢাকার বনানীর বাসিন্দা অরিত্রি আহমেদ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে। সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটু ঘুরেফিরে দেখলে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে অল্প দামে পুরোনো ভালো আসবাব পাওয়া যায়। বাড্ডার নতুন বাজার বিসমিল্লাহ মার্কেট থেকে ২৫ হাজার টাকায় ছয় চেয়ারসহ ডাইনিং-টেবিল কিনেছি।’