জিডিপিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অবদান বাড়াতে বন্দর ও শুল্ক কার্যক্রমের অটোমেশন, লজিস্টিক সুবিধা বৃদ্ধি, সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা কমানো দরকার। সেই সঙ্গে লেনদেন ভারসাম্যের উন্নতি, বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়ানো ও ব্যাংকঋণের সুদহার যৌক্তিকভাবে কমানো জরুরি বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
আজ মঙ্গলবার ডিসিসিআই আয়োজিত ‘ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া সহজীকরণ: প্রেক্ষিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আশরাফ আহমেদ এই অভিমত ব্যক্ত করেন। খবর বিজ্ঞপ্তি।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ আরও বলেন, সম্প্রতি টাকার মূল্যমান হ্রাস, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বল্পতা, ব্যাংকঋণের সুদের উচ্চহার, ঋণপত্র খোলার প্রতিবন্ধকতাসহ নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করছে বেসরকারি খাত। এ ছাড়া বন্দরগুলোতে আমদানি পণ্যের শুল্কায়নে পদ্ধতিগত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা, নানা ধরনের জরিমানা আরোপের ফলে ব্যবসায়িক খরচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
দেশের বন্দরগুলোর কার্যক্রমে অটোমেশনের অভাব, টেস্টিং ও স্ক্যানিং সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণেও পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ করেন আশরাফ আহমেদ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৫৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে রপ্তানি বাড়াতে বন্দরের কার্যক্রমে অটোমেশনের পাশাপাশি সহজীকরণ, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, বন্দর ও কাস্টমস হাউসে নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, বন্দরগুলোর সঙ্গে স্থল, রেল ও জলপথের সংযোগ উন্নীতকরণ ও আন্তর্জাতিক লেনদেন প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে জোর দেন ডিসিসিআই সভাপতি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের সদস্য (ফিন্যান্স) এস এম লাভলুর রহমান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর এম ফজলুর রহমান, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপসচিব (পরিচালক, ট্রাফিক) মো. কামাল হোসেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ডব্লিউটিও অনুবিভাগ) ফারহানা আইরিছ ও বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাসান আলী অংশগ্রহণ করেন।
এস এম লাভলুর রহমান বলেন, বন্দরের নিয়োজিত সরকারি সংস্থাসমূহের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা দেখা যায়। তিনি আরও বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হলে কার্গো সুবিধা আরও দুই-তিন গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং সেখানে আরও তিনটি কার্গো ভিলেজ স্থাপন করা হবে। বিমানবন্দরগুলো পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের কার্যক্রম চলমান আছে বলে তিনি অভিহিত করেন।
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যোগ দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর এম ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বন্দরে কনটেইনার–জটসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।
মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই পরিচালক তাসকিন আহমেদ, রাজীব এইচ চৌধুরী, সাবেক সহসভাপতি এম আবু হোরায়রাহ, সাবেক পরিচালক এ কে ডি খায়ের মোহাম্মদ খান, আহ্বায়ক মো. সাইফুর রহমান প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন। ডিসিসিআই সহসভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।