মানুষ দিনের একটা বড় সময় কর্মস্থলে কাটান। ফলে কর্মস্থলের পরিবেশ মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
কাজ করার পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত, এ নিয়ে বিশ্বের অধিকাংশ কর্মী হয়তো একবাক্যে বলবেন, যে প্রতিষ্ঠান কর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে বেশি নজর দেয়, তাঁদের গুরুত্ব দেয়, সেটাই সবচেয়ে ভালো কর্মস্থল।
‘ফরচুন হান্ড্রেড বেস্ট কোম্পানিজ টু ওয়ার্ক ফর ২০২৩’ শীর্ষক জরিপে এবার বিশ্বের সবচেয়ে ভালো কর্মস্থল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে প্রযুক্তি কোম্পানি সিসকো সিস্টেমস। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার তারা শীর্ষস্থান ধরে রাখল।
দেখে নেওয়া যাক, ঠিক কী কারণে এ কোম্পানি বিশ্বের সেরা কর্মস্থল হিসেবে বিবেচিত হলো। এ কোম্পানির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো তার অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ। সেখানে কাজ করা নারী ও সংখ্যালঘু কর্মী যথাক্রমে ৩১ ও ৬৯ শতাংশ।
এ কোম্পানিতে আফ্রিকান-আমেরিকান ৬ শতাংশ, এশীয় ৩৩ শতাংশ, ককেশীয়-শ্বেতাঙ্গ ৪৯ শতাংশ ও হিস্পানিক-লাতিন আমেরিকান ৭ শতাংশ। এ ছাড়া চিহ্নিত করা হয়নি এমন জাতিগোষ্ঠীর কর্মী ৪ শতাংশ।
ফরচুন ম্যাগাজিনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেগান লিওনহার্ড বলেন, সিসকো কর্মস্থলে জাতিগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২০ সালে তাদের আফ্রিকান-আমেরিকান ও সামগ্রিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গ কর্মী ছিলেন ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০২২ সালে যা ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
২০০০ সালের পর সিসকোর চাকরির প্রবেশ পর্যায়ে আফ্রিকান-আমেরিকান ও সামগ্রিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গ কর্মী ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া পরিচালক পর্যায়ে তাদের সংখ্যা ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া ভাইস প্রেসিডেন্ট ও উচ্চ পদে তাদের সংখ্যা ১৬০ শতাংশ বেড়েছে।
এ কোম্পানির উল্লেখযোগ্য দিক হলো মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটির পরিমাণ একই—৬৫ দিন। তবে মায়েরা ৬৫ দিনের অতিরিক্ত ছুটি নিতে পারেন। উন্নয়নশীল দেশের কোম্পানিগুলোর চেয়ে তারা যে ক্ষেত্রে এগিয়ে সেটা হলো, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা। এ কোম্পানির কর্মীদের জন্য বছরে মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ১০টি অধিবেশন থাকে।
অর্থাৎ কর্মীদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা এ যুগের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, এখন কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য নিয়ে সচেতনতা অনেক বেড়েছে।
এ ছাড়া সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য কর্মীদের নানাভাবে অনুপ্রাণিত করা হয়। যেমন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নেওয়ার জন্য বেতনসহ ছুটি। সেরা কর্মস্থলের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে হিলটন। তবে এ কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জরিপের প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়নি। এরপর আছে যথাক্রমে আমেরিকান এক্সপ্রেস, ওয়েগম্যানস ফুড মার্কেটস, অ্যাকসেনচিউর, এনভিডিয়া, অ্যাটলাসিয়ান, সেলসফোর্স, কমকাস্ট ও ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল।
জরিপে আরও জানা যায়, শীর্ষ ১০০টি কোম্পানির মধ্যে ৯৬টি কোম্পানি বাড়ি থেকে কাজের সুবিধা দিয়ে থাকে। ১৭টি কোম্পানি অন্তত একটি রোগের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বাস্থ্যবিমা প্রিমিয়াম দিয়ে থাকে।
২২টি কোম্পানি কর্মীদের জন্য বিনা মূল্যে যতটা দরকার হয়, ঠিক ততটা মানসিক স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক অধিবেশন পরিচালনা করে থাকে। এ ছাড়া শীর্ষ ১০০টি কোম্পানিতে এখন প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ৩৪৯টি কর্ম খালি আছে।
এদিকে, বৈশ্বিক হিসাবরক্ষণ ও পেশাদারি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস ২০২৩ সালের বিশ্বের সেরা কর্মস্থলের তালিকায় ৩০ নম্বরে উঠে এসেছে।
পিডব্লিউসি সম্পর্কে কোম্পানির কর্মীরা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। এ কোম্পানির ৯০ শতাংশ কর্মী বলেন, কাজ করার জন্য এ কোম্পানি বেশ ভালো জায়গা। অথচ তালিকায় স্থান পাওয়া বা জরিপে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর ৫৭ শতাংশ কর্মী এমন কথা বলেছেন।
ফরচুনের জরিপে পিডব্লিউসি সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, এ কোম্পানির ৯৫ শতাংশ কর্মীকে অনেক দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৯৪ শতাংশ কর্মী বলেন, তাঁরা এ কোম্পানিতে কাজ করতে পেরে গর্বিত।
কোভিড সংক্রমণের সময় বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানির সিংহভাগ কর্মী ঘর থেকে কাজ করেছেন। এতে মানুষের মনোভাবে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। পরিবারকে বেশি সময় দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
সে কারণে বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর বিভিন্ন কোম্পানি যখন কর্মীদের কার্যালয়ে আসা বাধ্যতামূলক করল, তখন অনেকেই চাকরি ছেড়ে দেন। গণমাধ্যমের ভাষায় যাকে বলা হচ্ছে, গ্রেট রেজিগনেশন বা দলে দলে চাকরি ছাড়া। ফলে তৈরি হয়েছে কর্মীর সংকট।
এ বাস্তবতায় কর্মীদের ধরে রাখতে কর্মস্থলে পরিবেশ উন্নয়নের বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।