বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আরেক দফা বেড়েছে। তাতে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি প্রায় ৩০০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ৪০০ টাকার কাছাকাছি চলে গেছে। এই দুই ধরনের মুরগির জন্য এই দাম এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। রমজানে আর পণ্যের দাম বাড়বে না, এক সপ্তাহে ধরে সরকারের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও রোজার আগেই বাড়তে শুরু করল মুরগির দাম।
আজ সোমবার রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা মুরগি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে খুচরা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। আর সোনালি মুরগির খুচরা দাম পড়ছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা। গতকাল এক দিনের ব্যবধানেই খুচরা বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। গত দেড় থেকে দুই মাসের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ১০০ টাকার ওপরে বেড়েছে।
রাজধানীর রায়েরবাজারের সুমন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রফিকুল সুমন প্রথম আলোকে বলেন, কাপ্তান বাজার থেকে আজ পাইকারি হিসাবে প্রতি কেজি মুরগি ১০ টাকার মতো বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে। তাতে খুচরা বাজারে মুরগির দাম নতুন করে বেড়েছে। গত শনিবারও দাম কিছুটা বাড়তি ছিল, ফলে দাম আরও বাড়তির দিকে গেল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মুরগির দাম আবারও বেড়েছে—এ কথা উল্লেখ করে সেগুনবাগিচা বাজারের জরিনা ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী কাবিল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আজ প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। আর সোনালি মুরগির কেজি ৩৮০ টাকার নিচে বিক্রি করতে পারিনি। পাইকারি বাজারে মুরগির দাম বেশি। সরবরাহও অনেক বেশি তা বলা যাবে না। গত দুই দিন কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেশি রাখছেন পাইকারেরা।
মুরগির দাম বাড়ার পেছনে খামারি ও পাইকারদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, দেশে মুরগির খাদ্যের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির খরচও বেশি। এগুলো উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে।
তবে পোলট্রির খাবারের দাম গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বাড়লেও মুরগির দাম গত দেড় থেকে দুই মাসে বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।
ছোট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আছে, মুরগি ও ডিমের বাজার বড় ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজারে জেঁকে বসেছেন। তাঁরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে লাভবান হচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেকে। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন ক্রেতা ও উৎপাদক উভয়ই।
রোজার সময় বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য দফায় দফায় আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এ সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে বাজারে তদারকি বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদারকি ও সচেতনতা বাড়াতে সীমিত জনবল নিয়ে হলেও দল গঠন করে বাজারে বাজারে পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে মুরগি ও ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগে কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে কমিশনে মামলা চলমান। সেগুলোর অনুসন্ধানসহ সার্বিক কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণত শবে বরাতের পরে মুরগির বাজার কিছুটা কমতে শুরু করে। কিন্তু এবারে ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে মুরগির দাম বেড়েছে। রোজার আগে আরেক দফা দাম বাড়ল। শেষ পর্যন্ত এই দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সে সম্পর্কেও কোনো ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বাজারে দাম যতই বাড়ুক, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারিরা মুরগির যৌক্তিক দাম পাওয়া থেকে এখনো বঞ্চিত বলে জানাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিসি) সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে দাম বেশি থাকলেও খামার পর্যায়ে দাম সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তাতে এরই মধ্যে অনেক খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। দাম বাড়ার কারণে অনেকে মুরগি ওঠাতে চাইলেও সিন্ডিকেটের কারণে মুরগির বাচ্চা পাচ্ছেন না। এরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। খাবারের বাজারও তাদের হাতে। এতে খামারিদের জন্য দিন দিন পরিস্থিতি জটিল যাচ্ছে।