দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে রপ্তানির ন্যূনতম মূল্য বেঁধে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় শনিবার জানিয়েছে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ সিদ্ধান্ত আজ ২৯ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতি টন পেঁয়াজের দাম ৮০০ ডলার হলে কেজিপ্রতি এর রপ্তানি মূল্য পড়বে ৬৭ রুপি। দেশের ভেতরে কোনো কোনো বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৮০ রুপি পর্যন্ত উঠে গেছে। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
এ ছাড়া বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অতিরিক্ত দুই লাখ টন পেঁয়াজ কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে তারা আরও পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ কিনেছিল। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এ বছর তারা সাত লাখ টন পেঁয়াজ কিনছে।
এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, শুধু বেঙ্গালুরু রোজ ও কৃষ্ণপুরাম জাতের পেঁয়াজ ছাড়া সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে এই ন্যূনতম মূল্য প্রযোজ্য হবে। আস্ত পেঁয়াজ, কাঁটা পেঁয়াজ, ভাঙা ও গুঁড়া—সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানিতেই এই ন্যূনতম মূল্য প্রযোজ্য হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো দেশেই যেকোনো পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে। এ বিষয়ে বাধা নেই। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতি টন পেঁয়াজে ন্যূনতম ৮০০ ডলার নিতে হবে, এর নিচে নয়। জাহাজে পরিবহন ও বিমার খরচ এ দামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।
এর আগে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল। তখন এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এমনকি তাঁরা ধর্মঘটও করেন। এর মধ্যে আবার রপ্তানির ন্যূনতম দাম বেঁধে দেওয়া হলো।
ভারত সরকারের বক্তব্য, বর্তমানে পেঁয়াজের মজুত স্বাভাবিকের চেয়ে কম। বছরের শুরুর দিকে অসময়ে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কারণে মজুতের প্রায় ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সামগ্রিকভাবে এবার পেঁয়াজের উৎপাদনও কমে গেছে। ভারতে গত বছর ২ দশমিক ৫৩ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। অথচ এ বছর পেঁয়াজ চাষের জমি কমে ২ দশমিক ৩১ লাখ হেক্টর হয়েছে।
তবে এ বিজ্ঞপ্তি জারির আগে যেসব পেঁয়াজ শুল্কায়নের জন্য বন্দরে আনা হয়েছে, সেই পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এই ন্যূনতম মূল্য প্রযোজ্য হবে না।
চলতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে ভারতে টমেটোর দাম আকাশ ছুঁয়েছিল। এখন পেঁয়াজের দাম বাড়লে ভোটের রাজনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। অন্য দিকে পেঁয়াজের দাম কম রাখতে গিয়ে চাষিরা ঠিক দাম না পেলে তার ক্ষোভও সামলাতে হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই দ্বিমুখী সমস্যায় পড়ে মোদি সরকার একই সঙ্গে ক্রেতা ও চাষিদের মধ্যে ভারসাম্য রাখার নীতি নিয়েছে। সেটা হলো, চাষিদের কাছ থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে কম দামে দেশের বাজারে বিক্রি করা। সে জন্য যত ভর্তুকি লাগবে, তা কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে।
আগামী বছর ভারতে সাধারণ নির্বাচন। তার আগে আছে বেশ কয়েকটি রাজ্য নির্বাচন হবে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী। তা যেন আর না বাড়ে, সেটা নিশ্চিত করতেই দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।