আইএমএফের শর্ত

পাকিস্তানে বিলাসদ্রব্যে করহার বৃদ্ধি

সংসদ অধিবেশনে বক্তব্য দিচ্ছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইশাক দার।
ডন নিউজ টিভি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত মানতে এবার বিলাসবহুল দ্রব্য ও সেবায় করহার বৃদ্ধি করেছে পাকিস্তান। সোমবার পাকিস্তানের সংসদে এ-সংক্রান্ত বিল পাস হয়েছে। এতে দেশটির মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়বে। খবর ইকোনমিক টাইমসের।

পাকিস্তানে এখন যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা আছে, তা দিয়ে এক মাসের বেশি আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা যাবে না। এ পরিস্থিতিতে দেশটির সরকার ইতিমধ্যে খাদ্য ও ওষুধ ছাড়া বিভিন্ন বিলাসদ্রব্যের আমদানি সীমিত বা স্থগিত করেছে। এখন বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পাকিস্তান আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে। আইএমএফের ঋণ পেতে হলে তাদের শর্ত না মেনে উপায় নেই।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন বলছে, আইএমএফের শর্ত পূরণে আগামী সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে ১৭ হাজার কোটি রুপি বাড়তি আদায় করতে চায় পাক সরকার, যদিও আইএমএফ দেশটিকে বছরে ৮৫ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব আদায়ের শর্ত দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন সম্পূরক অর্থ বিল পাস করা হয়েছে।

ডন বলছে, বিলে সিগারেটের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো এবং সাধারণ বিক্রয় করহার ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৮ শতাংশ করা হয়েছে। বিক্রয় কর বা জিএসটি ১ শতাংশ বাড়লেও বিলাসদ্রব্যের ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে। মোট ৩৩টি খাতে বিক্রয় কর ১৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। দামি মুঠোফোন, আমদানি করা খাদ্য, সাজসজ্জার উপকরণ ও বিলাসদ্রব্য বিক্রির ওপর এই বাড়তি করারোপ করা হয়েছে।

উড়োজাহাজে প্রথম শ্রেণি ও বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এত দিন ২০ শতাংশ ফেডারেল এক্সাইজ ডিউটি বা ৫০ হাজার রুপির মধ্যে যে অঙ্ক বেশি, তা আরোপ করা হতো। এখন এসব ক্ষেত্রে নির্ধারিত কর আহরণ করা হবে।

দ্য ডন বলছে, পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইশাক দার এ বিল পেশের সময় সংসদে বলেছেন, এখন থেকে কানাডা, দক্ষিণ আমেরিকা ও উত্তর আমেরিকাগামী যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ২ লাখ ৫০ হাজার রুপি কর আদায় করা হবে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাগামী যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হবে ৭৫ হাজার রুপি এবং ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ ও দূর প্রাচ্যে ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার রুপি কর আদায় করা হবে।

ইশাক দার বলেন, ২০১৬-১৭ সালে পাকিস্তান বিশ্বের ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতি ছিল। আজ তাঁর অবস্থান ৪৭তম। সে জন্য তিনি ইমরান খানের পিটিআই সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি আরও বলেন, পিটিআই সরকার আইএমএফকে দেওয়া অঙ্গীকার রাখতে পারেনি এবং ক্ষমতা ছাড়ার আগে অর্থনীতিতে রীতিমতো অন্তর্ঘাত করে গেছে।

তবে বিলাসদ্রব্যে করহার বৃদ্ধির কারণে দেশটির আমজনতার বোঝা বাড়বে না বলে মনে করেন পাক অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষের দুর্গতি যেন না বাড়ে, সে জন্য বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রামের বরাদ্দ চার হাজার কোটি রুপি বাড়ানো হয়েছে।

তবে গত সপ্তাহে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে—৩৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। বিশ্লেষকেরা বলেন, আইএমএফের শর্ত মেনে নতুন করারোপ ও পেট্রলের মূল্যবৃদ্ধির জেরে মূল্যস্ফীতির সূচক এতটা উঠেছে। আইএমএফের সঙ্গে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে পাকিস্তানকে এসব করতে হয়েছে। শর্ত পূরণ করে অবশ্য পাকিস্তান ১১০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে। কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তান সরকার নানা চেষ্টা করেও সফলতা পাচ্ছে না।

কিন্তু ঋণের পরবর্তী কিস্তি নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে নির্ধারিত আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তবে দ্য ডন আজ জানিয়েছে, পরবর্তী কিস্তি নিয়ে চলতি সপ্তাহেই কর্মী পর্যায়ের ঐকমত্য হতে পারে।

দেউলিয়া পাকিস্তান

এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সম্প্রতি বলেছেন, দেশটি ইতিমধ্যে দেউলিয়া হয়ে গেছে। খবর ইকোনমিক টাইমসের।

শিয়ালকোটে অনুষ্ঠিত এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে খাজা আসিফ এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ইতিমধ্যে ঋণখেলাপি হয়ে গেছে এবং আমরা এক দেউলিয়া দেশে বাস করছি। দেশের প্রায় সবাই এর জন্য দায়ী—ক্ষমতাচক্র, আমলাতন্ত্র, রাজনীতিবিদ—সবাই। এ সমস্যার সমাধান দেশের ভেতরেই আছে, আইএমএফের কাছে নয়।’

উদাহরণ হিসেবে খাজা আসিফ বলেন, পাকিস্তানের দামি সরকারি জমিতে যে দুটি বিলাসবহুল গলফ কোর্স আছে, সে দুটি বিক্রি করলে দেশটির এক-চতুর্থাংশ ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব।

চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ক্ষমতাচক্র, আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিকদের দায়ী করেন খাজা আসিফ। তিনি বলেন, গত ৩৩ বছরের তিনি পাকিস্তানের সংসদ সদস্য, কিন্তু এর মধ্যে ৩২ বছর ধরেই রাজনীতির অবক্ষয় দেখছেন।