নিউইয়র্কে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
নিউইয়র্কে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

আইএমএফ থেকে নতুন ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাড়তি ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলমান কর্মসূচির বাইরে বাংলাদেশকে বাড়তি ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এই বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি।

বর্তমানে বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচির মধ্যে আছে। সাত কিস্তিতে বাংলাদেশের জন্য এই অর্থ ছাড় করার কথা। ইতিমধ্যে তিন কিস্তির অর্থ ছাড় করা হয়েছে। তবে এই কর্মসূচির বাইরে আরও ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বাড়তি ঋণ পেতে আগ্রহী বাংলাদেশ। এ নিয়েই এখন আলোচনা চলছে।

বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থানরত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল মঙ্গলবার (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের সাইডলাইনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় প্রস্তাবিত নতুন ঋণ কর্মসূচি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয় বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রমুখ।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার প্রাপ্যতা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করার এই প্রক্রিয়ায় আইএমএফের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের আরেকটি নতুন ঋণ কর্মসূচি প্রয়োজন। নতুন ওই ঋণের সিংহভাগ অর্থই কর্মসূচির শুরুতেই ছাড় করতে হবে। নতুন ঋণ কর্মসূচিটি চলমান ঋণ কর্মসূচির সঙ্গে একযোগে চলবে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, নতুন ঋণের বিষয়ে আইএমএফ বেশ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এর মধ্যে আইএমএফ তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু করেছে। চলমান সংস্কার কর্মসূচি ও অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা—এসব বিষয়ে সম্পর্কে আইএমএফ আগ্রহ দেখিয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ নিয়ে আলোচনার জন্য আইএমএফ একটি দল ঢাকায় পাঠিয়েছে বলে জানান তিনি।

আলোচনার সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিগত সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের বর্ণনা দিয়েছেন। সে সময় ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘এটি (বাংলাদেশ) একটি ভিন্ন দেশ। এটি বাংলাদেশ ২.০।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে জানান, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন ও সংবিধান নিয়ে ইতিবাচক সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে।

আইএমএফের ঋণের বিষয়ে ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, আইএমএফের যে দলটি ঢাকায় আছে, তারা আগামী মাসে সফরের প্রতিবেদন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করবে। এই দলের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে নতুন ঋণ দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারে আইএমএফ পর্ষদ।