‘বাকির টাকা’ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

অধিকাংশ ছোট ব্যবসায়ী বড়দের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য এনে বিক্রি করতেন। আর কেউ কেউ পাইকারিতে বিক্রি করতেন বাকিতে। বাকির হিসাবের খাতাও পুড়ে গেছে।

বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা একে অপরের কাছে বাকিতে লেনদেন করতেন। বড় ব্যবসায়ীরা পাইকারিতে ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে বাকিতে পণ্য বিক্রি করতেন। বকেয়ার হিসাবের খাতা পুড়ে যাওয়ায় এখন বড় ব্যবসায়ীরা ‘বাকির টাকা’ আদায় নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। একইভাবে ছোট ব্যবসায়ীরা কূলকিনারা পাচ্ছেন না বাকিতে নেওয়া কাপড়ের দাম তাঁরা কীভাবে পরিশোধ করবেন, এই চিন্তায়।

গতকাল বুধবার বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ২০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা জানিয়েছেন, বঙ্গবাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী পাইকারিতেই বেশি পণ্য বিক্রি করতেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা বাকিতে পণ্য পাঠাতেন। বড় অঙ্কের লেনদেন হতো বাকিতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৌখিক চুক্তিতে মৌসুম শেষে টাকা পরিশোধ করা হতো।

বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও এনেক্সকো টাওয়ারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানকার ব্যবসায়ীদের একে অপরের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকার কারণে বড়রা ছোটদের কাছে বাকিতে পণ্য সরবরাহ করতেন। মার্কেট পুড়ে যাওয়ায় এনেক্সকো টাওয়ারের অনেক বড় ব্যবসায়ীও এখন দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। ব্যবসা না থাকলে টাকা ফিরে পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। এ জন্য সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হোক।’

১৯৯২ সাল থেকে বঙ্গবাজারে ব্যবসা করছেন জেরিন গার্মেন্টসের মালিক জাকির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিপণিবিতানের দোতলায় আমার দোকানে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। পাইকারিতে পণ্য বিক্রি করতাম। স্বাভাবিক সময়ে দোকানে ১২–১৫ লাখ টাকার মালামাল থাকে। ঈদের কারণে লগ্নি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছি। ঠিক তখনই দোকানটা পুড়ে গেল। ব্যাংকের ঋণ না থাকলেও বাকিতে আনা তিন লাখ টাকা কীভাবে ফেরত দেব, তার কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছি না।’  

বঙ্গবাজারে তিন মাস আগে ব্যবসা শুরু করেছেন মাইমুনা গার্মেন্টসের মালিক সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘১০ বছর এই মার্কেটের একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছি। পরে মালিকের কাছ থেকে দোকানটি কিনে নিই। পুড়ে যাওয়ার আগে দোকানে সাড়ে চার লাখ টাকার মালামাল ছিল। ঈদ সামনে রেখে বাকিতে ৫০ হাজার টাকার মালামাল তুলেছিলাম। এখন এই টাকা ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থা নেই।’ সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসা করে পরিবারকে সাহায্য করতাম। এখন সাহায্য করা তো দূরের কথা, বাকির টাকা পরিশোধ আর ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে উঠব, সেই চিন্তায় দিশেহারা।’

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের মহানগরী মার্কেটের মাইমুনা গার্মেন্টস নামের আরেক দোকানমালিক আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানকার ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে আমি একজন। অগ্নিকাণ্ডে আমার দোকানের ৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাজারে আমার ১০ লাখ টাকার মতো বাকি রয়েছে। কিন্তু বাকির খাতাসহ সবকিছুই পুড়ে গেছে। তাই বাকির টাকা ফিরে পাব কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছি।’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। এসব ব্যবসায়ীর লগ্নি ৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে। ঈদ এলে স্বল্প পুঁজির এসব ব্যবসায়ীও বাকিতে কিংবা ধারের টাকায় বাড়তি পুঁজি ব্যবসায় লগ্নি করেন। এখন মার্কেট পুড়ে যাওয়ায় সব দিক থেকে তাঁরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায়। গত মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।’