চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ১০ হাজার কোটি রুপির বেশি বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বেরিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান সুদের হার, মন্দার আশঙ্কা এবং দেশীয় শেয়ারের অতিমূল্যায়ন—এ তিন কারণে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ভারতের বাইরে চলে যায়।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, এর আগে ভারতীয় কোম্পানিগুলোতে ইকুইটি হিসেবে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বেড়েই চলছিল। গত মার্চ থেকে আগস্ট—এই ছয় মাসে বিদেশিরা ১ লাখ ৭৪ হাজার কোটি রুপি ভারতীয় কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করেছিলেন।
ক্রেভিং আলফার ব্যবস্থাপক ও প্রধান অংশীদার মায়াঙ্ক মেহরা বিশ্বাস করেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জোর সম্ভাবনা, শেয়ারের আকর্ষণীয় মূল্যায়ন ও সরকারি সংস্কার কার্যক্রম আগামী মাসগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে।
জিওজিৎ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান আর্থিক স্ট্র্যাটেজিস্ট ভি কে বিজয়কুমার বলেন, ‘যেহেতু (শেয়ারের) মূল্যায়ন খুব বেশি উঁচুতে রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বন্ডের ওপর আকর্ষণীয় হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে, সে কারণে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের বিক্রির এই ধারা চলতে থাকবে।’ মার্কিন ১০ বছর মেয়াদি বন্ডে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ সুদ পাওয়া যাচ্ছে।
যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা গেছে যে সেপ্টেম্বরের ১৫টি লেনদেন দিবসের মধ্যে ১১ দিনই বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেছেন, যার মূল্য ছিল ১০ হাজার ১৬৪ কোটি রুপি। প্রাথমিক বাজারে একত্রে বেশি পরিমাণে বিক্রি হওয়া শেয়ার ও বিনিয়োগ এই হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
যত বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে, তার মধ্যে কেবল গত সপ্তাহেই বেরিয়ে গেছে ৪ হাজার ৭০০ কোটি রুপি। আগস্ট মাস থেকেই ভারতে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ কমছে। গত চার মাসের মধ্যে আগস্ট মাসে সবচেয়ে কম পোর্টফোলিও বিনিয়োগ আসে, যার পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ২৬২ কোটি রুপি।
গত কয়েক সপ্তাহে ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ কমছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষক হিমাংশু শ্রীবাস্তব।
মর্নিংস্টার ইন্ডিয়ার সহযোগী পরিচালক হিমাংশু শ্রীবাস্তব বলেন, বিনিয়োগকারীরা আরও সাবধান হয়েছেন এবং ভারতের মতো উদীয়মান বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা ‘দেখুন ও অপেক্ষা করুন’ নীতি অনুসরণ করছেন।
ইয়েস সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক হিতেশ জৈন বলেন, তেলের উচ্চ মূল্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বন্ড থেকে আয়ের কারণে পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা এখন দূরে সরে রয়েছেন। তবে ভারতে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ঘটলে তাঁরা আবার ফিরে আসবেন।
সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা গেছে যে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের খনিজ, বিদ্যুৎ, সেবা, জ্বালানি ও টেলিযোগাযোগ খাত থেকে বিনিয়োগ বেশি বেরিয়ে গেছে। তবে আর্থিক সেবা, খাদ্য, ভোক্তাসেবা, তথ্যপ্রযুক্তি ও স্থাবর সম্পত্তি খাতে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ এসেছে।