বাজারে বেশির ভাগ শাকসবজি এখনো উচ্চ দরেই বিক্রি হচ্ছে। তবে সরবরাহ বাড়ায় ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা দরে। ডিমের পাশাপাশি কমেছে কাঁচা মরিচের দামও।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ এখনো কম। গত কয়েক মাসে দেশে বন্যা-বৃষ্টির কারণে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে সবজির দাম শিগগিরই কমছে না। অন্যদিকে বড় উৎপাদক কোম্পানিগুলো সরাসরি আড়তে ডিম সরবরাহ শুরু করেছে। এতে গতকাল থেকে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে।
গতকাল রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে তা ২২০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। বিক্রেতারা জানান, পূজার ছুটির কারণে মাঝখানে বেশ কয়েক দিন মরিচ আমদানি বন্ধ ছিল। এখন আমদানি স্বাভাবিক হচ্ছে। ফলে মরিচের দাম আরও কমবে।
এখনো চড়া সবজির দাম
আগের সপ্তাহের তুলনায় কয়েকটি সবজির দাম কমলেও বাজারে এখনো বেশির ভাগ শাকসবজির দাম চড়া। গত সপ্তাহের তুলনায় বেগুনের দাম কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়ে গতকাল ১২০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স, পটোল, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙে ৮০-১০০ টাকায়; কাঁকরোল ১০০-১২০ টাকায়; করলা ও বরবটি ১২০-১৪০ টাকায়; মিষ্টিকুমড়া ও দেশি শসা ৭০-৮০ টাকায় এবং পেঁপে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অবশ্য কারওয়ান বাজারের মতো বড় বাজারে আরও কিছুটা কমে এসব সবজি কেনা গেছে।
সবজির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার শাকের দামও বেশি। যেমন গতকাল লালশাকের আঁটি ২০-৩০ টাকা, পুঁইশাক ৪০-৫০ টাকা ও লাউশাক ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ, রসুন ও আলুর দাম আগের মতোই রয়েছে। এর বাইরে মাঝারি মানের চালে ৩-৪ টাকা ও শুকনা আদা কেজিতে ৪০ টাকার মতো দাম বেড়েছে। গতকাল মাঝারি মানের ব্রি-২৮ চাল ৬২ টাকায় ও ব্রি-২৯ চাল ৬২-৬৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শুকনা আদা ২৬০-২৮০ টাকায় আর কাঁচা আদা বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকায়।
বাজারে যেসব পণ্যের দাম কমেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কাঁচা মরিচ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কেজিতে প্রায় ২০০ টাকার মতো কমেছে। গত সপ্তাহের বেশির ভাগ দিনে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০০-৫০০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে তা ২২০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। বিক্রেতারা জানান, পূজার ছুটির কারণে মাঝখানে বেশ কয়েক দিন মরিচ আমদানি বন্ধ ছিল। এখন আমদানি স্বাভাবিক হচ্ছে। ফলে মরিচের দাম আরও কমবে।
ডিমের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ
সাধারণ ভোক্তা, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের বড় উদ্বেগের জায়গা এখন ডিমের বাড়তি দাম। আগের সপ্তাহজুড়ে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৭০-১৮০ টাকায়; কখনো তা ১৯০ টাকাতেও উঠেছিল। তবে গতকাল এক ডজন ডিম বিক্রি হয় ১৬০ টাকা দরে। তবে পাড়ামহল্লায় এ দাম কিছুটা বেশি ছিল। ডিমের পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির দামও চড়া। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৯০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়াতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসে দুই দফায় মোট ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে ডিমের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে। এ ছাড়া ডিম উৎপাদনকারী বড় কোম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি পাইকারি আড়তে ডিম পাঠানো শুরু করেছে। এসব উদ্যোগের ফলে কমতে শুরু করেছে ডিমের দাম।
ডিমের পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির দামও চড়া। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৯০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গতকাল বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ঢাকার ডিম আড়তদারেরা জানান, শীর্ষস্থানীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিতভাবে সরকার নির্ধারিত দরে ঢাকার তেজগাঁও ও কাপ্তানবাজারে ডিম সরবরাহ করলে পণ্যটির দাম সহনীয় থাকবে।
আড়তদারেরা আরও বলেন, তেজগাঁও ও কাপ্তানবাজারে শীর্ষস্থানীয় উৎপাদকদের প্রতিদিন ১৫ লাখ করে ৩০ লাখ ডিম সরবরাহ করতে হবে। তার বাইরে প্রতিষ্ঠানগুলোর যে পরিমাণ ডিম থাকবে, সেগুলোও সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সভায় তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে শীতের সবজি চলে এলে ডিমের ওপর চাপ কমে আসতে পারে। তখন দাম আরও কমবে।