একনেক সভায় ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প পাস হয়। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এসব কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হবে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আরও ভালোভাবে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে দেশে ৬৭৪টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মিত হচ্ছে। ৬২টি জেলার ৩২২টি উপজেলায় এসব কমপ্লেক্স ভবন হবে। এ জন্য ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প পাস হয়। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এসব কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ১৯৯৬ সালে এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছিল।
আজ বৃহস্পতিবার একনেকের এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষ পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন।
প্রকল্পের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই প্রকল্পের আওতায় সব মিলিয়ে ৫০৬টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মিত হবে দেশের সাধারণ এলাকায়। আর ১৬৮টি কমপ্লেক্স ভবন হবে হাওর ও উপকূলীয় এলাকায়। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো: এক. ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্যকর স্থানীয় সরকার গঠন এবং একই ছাদের নিচে সরকারি সেবাসমূহ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ; দুই, শহরের সুবিধাদি গ্রামে সম্প্রসারণ এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
একনেক সভায় সব মিলিয়ে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১টি প্রকল্প পাস হয়
এ বিষয়ে পরিকল্পনাসচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জেনে অবাক হয়েছেন যে সব ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। কারণ, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে প্রকল্প নেওয়া হয়। এ ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
একনেক সভায় সব মিলিয়ে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১টি প্রকল্প পাস হয়। অন্য প্রকল্পগুলো হলো: ১৬৬ কোটি টাকায় মিসরের কায়রোতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স এবং আবাসিক ভবন নির্মাণ; ২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকার বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ (১ম সংশোধিত) ; ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাশিনাথ-দাশুরিয়া-নাটোর-রাজশাহী-নবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ-বালিয়াদিঘী বর্ডার জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করা (নবাবগঞ্জ অংশ); ৩৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যমান সরকারি মৎস্য খামারসমূহের সক্ষমতা ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন; ২৩৩ কোটি টাকার ইম্প্রুভমেন্ট অব ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার অব বাংলাদেশ ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ইন কক্সবাজার ডিস্ট্রিক্ট; ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলাজুড়ে পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন; ৯২৪ কোটি টাকার প্রমোটিং রেজিলিয়েন্স ফর ভালনারেবল থ্রু অ্যাকসেস টু ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ইম্প্রুভড স্কিলস অ্যান্ড ইনফরমেশন (১ম সংশোধিত); ৩ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার ৮টি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার, হৃদ্রোগ এবং কিডনি চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধন); ১১৫ কোটি টাকার ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কমপ্লেক্স স্থাপন এবং ১১৩ কোটি টাকার শাহবাগের বাংলাদেশ বেতার ভবন আগারগাঁওয়ে স্থানান্তর প্রকল্প।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু অনুশাসন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনাসচিব সত্যজিৎ কর্মকার। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কী ধরনের সুবিধা প্রত্যাহার হতে পারে এবং কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, তা নির্ধারণ করে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্য অনুশাসনগুলো হলো অল্প কিছু টাকা বরাদ্দ দিলে যেসব প্রকল্প শেষ হয়, তা বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প শেষ করা; মিসরের চ্যান্সারি ভবনে প্রবাসীদের সেবা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত স্থান রাখা; সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা কুড়িগ্রামের সব উপজেলায় রাস্তাঘাট-সেতু নির্মাণ; তাঁত বোর্ডের আওতাধীন প্রশিক্ষণে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া।
পরিকল্পনামন্ত্রীর এখতিয়ারে পাস হওয়া ৩০টি প্রকল্প আজকের একনেকে অবহিত করা হয়। এই সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প পাস করি।’