দেশের অর্থনীতিতে শিল্প-সাহিত্য ও নাটক-সিনেমার অবদান কমেছে। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের ১১টি উপখাত দিয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাব গণনা করা হয়। ওই ১১ খাতের মধ্যে শুধু কলকারখানার উৎপাদন এবং শিল্প-বিনোদন উপখাতেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে শিল্প ও বিনোদন খাতের মূল্য সংযোজন কমেছে ১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। আর কলকারখানার অবদান কমেছে ৯০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সদ্য প্রকাশিত ত্রৈমাসিক জিডিপির হিসাবে এই চিত্র উঠে এসেছে। মূলত দেশে জাতীয় নির্বাচনের আগের তিন মাসে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার কারণেই এমনটা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের আগের তিন মাসে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে কলকারখানায় উৎপাদন কমেছে। সে জন্য অর্থনীতিতে এই উপখাত থেকে মূল্য সংযোজন প্রায় হাজার কোটি টাকা কম হয়েছে।
বিবিএস বলছে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক অক্টোবর-ডিসেম্বরে সব মিলিয়ে কলকারখানা উৎপাদন থেকে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ছিল ২ লাখ ৭৭৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কলকারখানা উপখাত থেকে অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন কমেছে ৯০০ কোটি টাকা।
জিডিপি গণনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিবিএসের জাতীয় আয় শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূলত জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিল্প খাত শ্লথ ছিল। এই সময়ে কলকারখানায় উৎপাদন কমানো হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে জিডিপিতে। তিনি আরও বলেন, ওই তিন মাসে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। এটিও তখন কলকারখানায় উৎপাদন কমার একটি বড় কারণ।
এদিকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকলে শিল্প-সাহিত্য এবং নাটক-সিনেমার প্রতি জনগণের আগ্রহ কম থাকে। তখন নাটক-সিনেমা তৈরির প্রবণতা এবং তা সম্প্রচার দুটিই কম হয়। আবার মানুষজন রিসোর্ট-বিনোদনকেন্দ্রেও কম যান। এসবের প্রতিফলন ঘটেছে গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের জিডিপিতে। ওই প্রান্তিকে শিল্প ও বিনোদন খাত থেকে অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে ৩৪ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৬ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে এই খাতের অবদান কমেছে ১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।
এক বছর ধরেই ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব প্রকাশ করে আসছে বিবিএস। সংস্থাটির সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের সার্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত এক দশকে বছরওয়ারি কিংবা প্রান্তিক ভিত্তিতে কখনোই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের ঘরে নামেনি।