আলোচিত ও বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের (এস আলম) ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) আকিজ উদ্দিন–সংশ্লিষ্ট চার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে ৯৯ কোটি টাকার হদিস পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। এসব হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এর ফলে এসব হিসাব থেকে টাকা তোলার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এস আলমের ব্যক্তিগত সচিবের পাশাপাশি আকিজ উদ্দিন ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক। সরকার পরিবর্তনের পর তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ব্যাংকটি। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর পদত্যাগ ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদিত হয়।
জানা গেছে, সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে স্থায়ী হওয়ায় সাত বছর ধরে তাঁর পক্ষে গ্রুপের ব্যাংকগুলো পরিচালনা করতেন আকিজ উদ্দিন। এসব ব্যাংকে নিয়োগ, কেনাকাটা, পদোন্নতি ও ঋণ বিতরণ—সবই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। গ্রুপটির পক্ষে নামে-বেনামে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থাকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রভাবিত করতেন তিনি। নিজেকে গ্রুপের বিকল্প চেয়ারম্যান হিসেবেও পরিচয় দিতেন। তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কক্ষ ও গভর্নরের বাসভবনেও দেখা যেত। তাঁর প্রভাবের মাত্রা এতটাই ছাড়িয়েছিল যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়োগ ও কর্মকর্তাদের পদায়নও তিনি ঠিক করে দিতেন। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তাঁর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। এস আলম গ্রুপের পাশাপাশি নিজের আত্মীয়স্বজনের নামেও তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে নেন। দেশে ও বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
আকিজ উদ্দিনের সঙ্গে সখ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক গভর্নর ফজলে কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘এস আলম সাহেব সিঙ্গাপুরে থাকায় অনেক সময় তাঁর কর্মকর্তারা আসতেন। আমি কখনো কাউকে অতিরিক্ত সুবিধা দিইনি।’
সরকার পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক থেকে স্বল্পখ্যাত একটি কোম্পানির নামে থাকা টাকা তুলতে গেলে কর্মকর্তারা তা আটকে দেন। এরপর বিএফআইইউ খোঁজ নিয়ে আকিজ উদ্দিন–সংশ্লিষ্ট চার হিসাব অবরুদ্ধ করে দেয়। এর মধ্যে রহমান রহমান অ্যান্ড সন্সে জমা আছে ৫৬ কোটি ২৪ লাখ, আলম ট্রেডিং অ্যান্ড বিজনেস হাউসে ৮ কোটি ২৮ লাখ, নুরুল আলম নামের একটি ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৪৮ লাখ, মোস্তাক ট্রেডার্সে ১৫ কোটি ৪ লাখ টাকা ও নজরুল এন্টারপ্রাইজে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
আকিজ উদ্দিন এস আলমের একই থানাধীন পটিয়ার বাসিন্দা। তিনি ১৯৯৭ সালে এসএসসি পাস করে পটিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এইচএসসি ও স্নাতক পাস করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে যোগ দেন। এর কিছুদিন পর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ পান। ২০২১ সালে তিনি ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এভিপি হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি হিসেবে যোগ দেন তিনি। ব্যাংক খাতে তাঁর মতো এত দ্রুত ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি এর আগে কেউ পাননি বলে জানিয়েছেন শীর্ষ দুটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি হলেও তিনি মূলত এস আলম গ্রুপের সব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতেন। পাশাপাশি আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে চলতেন ও সুবিধা দিতেন। অবসরে যাওয়ার পর এসব সংস্থার কর্মকর্তাদের গ্রুপের বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরি দিতেন। এ জন্য আর্থিক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় পরিচিত নাম আকিজ উদ্দিন। সরকার পরিবর্তনের পর তাঁকে দেখা যায়নি।