গুলশান-বনানী হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি আবাসিক এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাজধানীর এই অভিজাত এলাকায় শীর্ষ ধনীরাই বাস করেন, সেখানে রয়েছে বিভিন্ন করপোরেট অফিস। ওই এলাকায় ফ্ল্যাট-প্লটের দাম আকাশচুম্বী।
ব্যবসায়ী, আমলা, কূটনীতিক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এই এলাকায় গুলশান-বনানীর কোনো কোনো সড়কে এক কাঠা জমি কিনতে এখন সরকারকে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা কর দিতে হবে। এর নিচে কর হবে না, অর্থাৎ এটাই সর্বনিম্ন হার।
নিয়মটি করা হয়েছে এভাবে—গুলশান ও বনানীর কিছু এলাকায় প্রতি কাঠায় ২০ লাখ টাকা কিংবা দলিল মূল্যের ৮ শতাংশের মধ্যে যে পরিমাণটি বেশি, তা কর হিসেবে দিতে হবে। এই হার সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। গুলশানে কেউ যদি ৫ কাঠার একটি বাণিজ্যিক প্লট কেনেন, তাহলে তাঁকে কমপক্ষে এক কোটি টাকা কর দিতে হবে। আর ওই এলাকায় ৫ কাঠার আবাসিক প্লট কিনলে অর্ধকোটি টাকা কর দিতে হবে। এটিও যেকোনো আবাসিক এলাকার মধ্যে সর্বোচ্চ কর।
ষাটের দশকে গুলশান ও বনানী আবাসিক এলাকার গোড়াপত্তন শুরু হয়। সরকারি সংস্থা ডিআইটি (পরে রাজউক) জমি অধিগ্রহণ করে প্লট করে। স্বাধীনতার পরপর এ দেশের ধনীদের মধ্যে অনেকে গুলশান ও বনানীতে বসবাসের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেন। এভাবেই গুলশান ও বনানী হয়ে ওঠে এ দেশের ধনিক শ্রেণির পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে জমি হস্তান্তরের কর পুনর্বিন্যাস করা হয়। এ ক্ষেত্রে নতুন করহার নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যে ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ে নতুন এই করহার কার্যকর করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কর আরোপের তালিকায় রাখা হয়েছে গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ সাউথ রোড ও মহাখালী এলাকা। এসব এলাকার বাণিজ্যিক প্লটের ক্ষেত্রে প্রতি কাঠায় ২০ লাখ টাকা কিংবা দলিল মূল্যের ৮ শতাংশ, যেটি বেশি, তা কর হিসেবে দিতে হবে।
অন্যদিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, উত্তরা, সোনারগাঁও জনপথ, শাহবাগ, পান্থপথ, বাংলামোটর, কাকরাইলে জমি কিনলে কাঠাপ্রতি (বাণিজ্যিক প্লট) ১২ লাখ টাকা কর দিতে হবে।
দেশের যেকোনো এলাকায় ফ্ল্যাট কিনলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৮০০ টাকা কিংবা দলিলমূল্যের ৮ শতাংশ কর দিতে হবে।
প্রতিটি এলাকায় চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ন্যূনতম করের পরিমাণ ধরে দেওয়া হয়েছে। গুলশান ও বনানীর কিছু অংশ, ধানমন্ডি, বারিধারা ডিওএইচএস, বনানী ডিওএইচএস, মহাখালী ডিওএইচএস, বসুন্ধরা (ব্লক এ-আই), নিকেতন, বারিধারায় ১০ লাখ টাকা; বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা, গেন্ডারিয়া, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ও সিডিএ অ্যাভিনিউতে কাঠাপ্রতি ৮ লাখ টাকা; এবং নবাবপুর, ফুলবাড়িয়ায় কাঠাপ্রতি ৬ লাখ টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
এ ছাড়া উত্তরা (১-৯ সেক্টর), খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকা, আজিমপুর, রাজারবাগ, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাঁচলাইশ, নাছিরাবাদ, মেহেদীবাগে কাঠাপ্রতি ন্যূনতম তিন লাখ টাকা; পূর্বাচল, বসুন্ধরা (ব্লক কে-পি), ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় তিন লাখ টাকা; কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, ইস্কাটন, গ্রিন রোড, এলিফ্যান্ট রোড, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মগবাজার, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, শেরেবাংলা নগর, লালমাটিয়া, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ও চট্টগ্রামের খুলশী কাঠাপ্রতি ৫ লাখ টাকা; কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর, ইস্কাটন, গ্রিন রোড, এলিফ্যান্ট রোডের (মূল রাস্তার ১০০ ফুটের বাইরে) আড়াই লাখ টাকা; উত্তরা (সেক্টর ১০-১৪), নিকুঞ্জ, বাড্ডা (কিছু অংশ), গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, টঙ্গী শিল্প এলাকায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা; শ্যামপুর শিল্প এলাকা, জুরাইন এক লাখ টাকা; রাজারবাগের কিছু অংশ দেড় লাখ টাকা; খিলগাঁওয়ে দেড় লাখ টাকা, গোড়ান ও হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায় ৬০ হাজার টাকা কাঠাপ্রতি ন্যূনতম কর দিতে হবে।
ওপরে উল্লিখিত এলাকাগুলো ছাড়া রাজউক ও চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (সিডিএ) অন্যান্য এলাকায় জমি বেচাকেনা হলে চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ; গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা (রাজউক ও সিডিএ এলাকা ছাড়া) এবং অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও জেলা সদর পৌর এলাকায় চুক্তিমূল্যের ৬ শতাংশ কর দিতে হবে। অন্যান্য পৌরসভা এলাকায় চুক্তিমূল্যের ৪ শতাংশ এবং দেশের অন্য এলাকায় চুক্তিমূল্যের ২ শতাংশ কর দিতে হবে।