ধসে পড়া মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের যুক্তরাজ্য শাখা মাত্র এক পাউন্ডের বিনিময়ে কিনে নিয়েছে ‘এইচএসবিসি’। এই প্রতীকী দামে ব্যাংকটির ব্রিটেনের কার্যক্রম কিনে নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো দেশটির স্টার্টআপগুলোর গুরুত্বপূর্ণ এক ঋণদানকারীকে সংকট থেকে বাঁচানো। খবর রয়টার্সের।
১ পাউন্ড ১ দশমিক ২১ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি প্রায় ১২৭ টাকার সমান। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের ধস হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক ধসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। সেখানে কর্তৃপক্ষ এখন ব্যাংকটির জন্য তহবিল জোগানোর চেষ্টা করছে এবং এই ধস যাতে আর্থিক খাতে বড় রকমের ক্ষতি না করে, তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের ধসের পর প্রযুক্তি খাতের অন্যতম বড় এই ঋণদানকারীর ব্রিটেন শাখাকে নিয়ে কী করা যায়, তা নিয়ে দেশটির সরকার, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের মধ্যে সপ্তাহান্তে বৈঠক হয়েছে।
এইচএসবিসির এই অধিগ্রহণের ফলে তাদের সেই প্রাণান্তকর চেষ্টার আপাত অবসান ঘটল। পৃথিবীর অন্যতম বড় ব্যাংক হলো এইচএসবিসি, যাদের ২ দশমিক ৯ লক্ষ কোটি ডলারের সম্পদ রয়েছে।
ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, এইচএসবিসি ইউরোপের সবচেয়ে বড় ব্যাংক। এসভিবি ইউকে’র গ্রাহকেরা এখন নিশ্চিত বোধ করতে পারেন, কারণ, একটি ব্যাংকের শক্তি ও নিরাপত্তা এখন তাদের সঙ্গে রয়েছে।
সাংবাদিকদের জেরেমি হান্ট আরও বলেন, ‘এমন এক অবস্থার মধ্যে আমরা পড়েছিলাম, যেখানে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কোম্পানি, যেগুলো কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারত এবং সেটা ঘটলে তা হতো একটি মারাত্মক বিপজ্জনক ব্যাপার।’
এসভিবিকে বাঁচাতে এইচএসবিসির এগিয়ে আসার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে জেরেমি হান্ট বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার ছিল ব্যাংকটির ইউকে শাখার জন্য যেকোনোভাবেই হোক না কেন, ব্রিটেনের করদাতাদের অর্থ ব্যবহার না করা।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, আর্থিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ধরে রাখতে তারা এসভিবির ইউকে শাখা বিক্রির পদক্ষেপ নিয়েছিল। এটি বিক্রির ফলে ব্যাংকে রাখা আমানত নিরাপদ এবং পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থাও নিরাপদ রয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
রয়্যাল লন্ডন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সিনিয়র ফান্ড ব্যবস্থাপক ও এইচএসবিসির বিনিয়োগকারী রিচার্ড ম্যারউড বলেন, দেখে মনে হচ্ছে এটি খুব ভালো একটি চুক্তি হয়েছে। এসভিবি অর্থ ও আমানতকারীদের আস্থার সংকটে ভুগছে। অন্যদিকে, এইচএসবিসির দুটিই রয়েছে।
এসভিবি ইউকে-কে তার মার্কিন মূল কোম্পানি থেকে আলাদা করা হয়েছে। এইচএসবিসি বলছে, মূল কোম্পানির সম্পদ ও দায় তাদের অধিগ্রহণের আওতাভুক্ত নয়। এইচএসবিসির প্রধান নিবাহী কর্মকর্তা নোয়েল কুইন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে আমাদের ব্যবসার জন্য এই অধিগ্রহণ একটি ভালো কৌশলগত পদক্ষেপ’।
এসভিবি ইউকে’কে ৫৫০ কোটি পাউন্ডের মতো অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে। অন্যদিকে, তাদের আমানতের পরিমাণ প্রায় ৬৭০ কোটি পাউন্ড। এই তথ্য জানিয়ে এইচএসবিসি বলেছে যে অধিগ্রহণের কার্যক্রম দ্রুতই শেষ করা হচ্ছে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, এসভিবি ইউকে’র স্থিতিপত্রের আকার হবে ৮৮০ কোটি পাউন্ড। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ব্যাংক ব্যবস্থায় নগদ অর্থ জোগাতে ব্রিটেন এখনো কোনো বিশেষ ঘোষণা দেয়নি। ব্রিটেনের অনেক কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে এসভিবির লেনদেন ছিল।
এসভিবি ইউকে কেনার জন্য আরও অনেকে চিন্তাভাবনা করছিল। গতকাল রোববার ব্যাংক অব লন্ডন জানিয়েছিল যে তারা একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে। সফটব্যাংকের মালিকানাধীন ওকনর্থ ব্যাংক একই রকম পরিকল্পনা করছিল বলে একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।