পেঁয়াজ
পেঁয়াজ

পেঁয়াজের দাম কমেনি, বাজারে এসেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ

ভারত গত শুক্রবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানোর পর দেশের বাজারে চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে গতকাল শনিবার পুরোনো দেশি ও ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম রাতারাতি কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আজ রোববার বাজারে পেঁয়াজের দাম আর না বাড়লেও গতকালের তুলনায় কমেওনি। তবে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজের চালান বাজারে আসতে শুরু করেছে। এই পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পাতাসহ নতুন পেঁয়াজও এসেছে। দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৯০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা বাবুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গত রাতে ঢাকার বাজারে যে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ঢুকেছে, তা পাইকারিতে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। দেশি পুরোনো পেঁয়াজ ও ভারতীয় পেঁয়াজের তুলনায় এর দাম বেশ কম। এ জন্য এই ধরনের পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

ঢাকার বিভিন্ন বাজার থেকে পুরোনো দেশি পেঁয়াজ কিনতে প্রতি কেজির দাম অন্তত ২০০ টাকা দিতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। চীন থেকে আমদানি করা বড় আকারের পেঁয়াজের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। চীনের এই পেঁয়াজের ব্যবহার বাসাবাড়িতে খুব একটা দেখা যায় না।

ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এই সময়ে পুরোনো দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ এমনিতেই কম থাকে। দেখা যায়, আমদানি করা পেঁয়াজের পাশাপাশি নতুন পেঁয়াজ এসে বাজার দখল করে। তবে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হওয়ার খবরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে যেহেতু নতুন পেঁয়াজ আসা শুরু করেছে, তাতে সপ্তাহখানেকের মধ্যে দাম নেমে আসবে।

মুড়িকাটা ধরনের পেঁয়াজের অন্যতম উৎপাদন এলাকা উত্তরাঞ্চলের পাবনা জেলা। এই জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মুন্নাফ ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক শিপন হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, চার-পাঁচ দিন হলো হাটে আগাম জাতের (মুড়িকাটা) নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এই পেঁয়াজ পাইকারিতে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে ব্যবসায়ীরা মনে করেন, আগাম পেঁয়াজ বাজারে উঠলেও আগামী কিছুদিন এই পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে আমদানির বিকল্প উৎসও খুঁজতে হবে। পেঁয়াজ আমদানির জন্য ভারতের পর কাছের বিকল্প দেশ মিয়ানমার। সেখান থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারজাত করা যায়। এ ছাড়া সম্ভাব্য অন্যান্য উৎস হলো পাকিস্তান, মিসর, চীন ও নেদারল্যান্ডস। তবে এসব দেশ থেকে সমুদ্রপথে পেঁয়াজ আমদানিতে সময় লাগে ১৩ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত।

আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে মিয়ানমার সবচেয়ে সুবিধাজনক বিকল্প উৎস হলেও এই সুবিধা এখন পাওয়া যাবে না। কারণ, দেশটির রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র জাতিগোষ্ঠীর সংঘর্ষ চলছে। এই সংঘর্ষের ফলে গত ১৪ নভেম্বর থেকে ২১ দিন টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি বন্ধ ছিল। ৫ ডিসেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে অল্প কিছু পণ্যের আমদানি শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি হয়নি।

ভারত সরকার শুক্রবার নিজের দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানিয়েছে। মৌসুমের শেষ দিকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সাধারণত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেন। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ভারত থেকে সাড়ে ছয় লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। প্রতিবছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদিত হয় প্রায় ৮ লাখ টন। এ ছাড়া এ বছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে। সব মিলিয়ে উৎপাদিত হবে প্রায় ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ। এই মুড়িকাটা ও গ্রীষ্মকালীন নতুন পেঁয়াজ বাজারে থাকবে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস। এরপর মূল পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। উৎপাদিত হতে পারে ২৬–২৮ লাখ টন।