লুটপাটের আশঙ্কায় দীর্ঘ সময় দোকান বন্ধ ছিল

সহিংসতা ও লুটপাটের আশঙ্কায় গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর অনেক স্থানেই দিনের দীর্ঘসময় ধরে দোকানপাট বন্ধ ছিল। খুচরা বিক্রেতারা জানান, গত সোমবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে তাঁরাও এক ধরনের ভয়ের মধ্যে ছিলেন।

ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন শেখ হাসিনা। সেই পদত্যাগ উদ্‌যাপনে রাজপথে মানুষের ঢল নামে। কিন্তু বিকেল থেকেই বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও লুটপাট শুরু হয়। এতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে বেশির ভাগ এলাকায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দোকানপাট বন্ধ ছিল। বিকেলের পর থেকে ধীরে ধীরে দোকান খুলতে শুরু করে।

রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১০, রামপুরা, উত্তরাসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বেশি সহিংসতা হয়েছিল (যেমন রামপুরা ও উত্তরা), সেখানে বন্ধ দোকানপাটের সংখ্যাও বেশি ছিল। খুচরা বাজারের পাশাপাশি পাইকারি বাজারেও এর প্রভাব দেখা গেছে।

গতকাল বিকেলে কারওয়ান বাজারে সবজির আড়তে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেগুন, লাউ, পেঁপে, চিচিঙ্গা, ফুলকপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বস্তায় বস্তায় সাজিয়ে রাখা আছে। অনেক সবজি পচে যাচ্ছে। যেগুলো পচে যায়, সেগুলো অদূরেই আবর্জনার স্তূপে ফেলে দেওয়া হয়। আড়তের বিক্রেতারা জানান, সহিংসতার কারণে গত দুই দিন এসব সবজি ঢাকার বাইরে আটকে ছিল। আর সোমবার রাতে সবজি কারওয়ান বাজারে এসে পৌঁছালেও ক্রেতা কম ছিলেন। ফলে অধিকাংশ সবজিই অবিক্রীত রয়ে যায়।

কারওয়ান বাজার আড়তের গাউছিয়া ভান্ডারের বিক্রেতা মো. রাব্বি বলেন, ‘সাধারণত আমরা প্রতি বস্তা (১২০ কেজি) বেগুন চার–পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করি। কিন্তু সোমবার রাতে প্রতি বস্তা বেগুন বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫০০–১০০০ টাকা।’

রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ের আলম রেস্তোরাঁ গতকাল বন্ধ পাওয়া যায়। রেস্তোরাঁর সামনে কথা হয় এটির ব্যবস্থাপক গাজী নূরে আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন তাঁদের রেস্তোরাঁয় অন্তত দেড় লাখ টাকা বিক্রি হয়। কিন্তু গত দুই দিনে আয় একেবারে বন্ধ রয়েছে। নূরে আলম বলেন, ‘নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সোমবার বিকেল থেকে রেস্তোরাঁ বন্ধ রেখেছি। পরিস্থিতি যেহেতু স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে; তাই বুধবার (আজ) থেকে রেস্তোরাঁ চালু করতে পারব বলে আশা করছি।’

শেওড়াপাড়া এলাকার রিকল জেনারেল স্টোরটি মূল সড়ক থেকে বেশ খানিককটা ভেতরে অবস্থিত। তারপরও অজানা আশঙ্কায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত দোকানটি বন্ধ রাখেন বিক্রেতা মো. মাসুদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘রাতভর (সোমবার) বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে। আমাদের এলাকাতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। এসব কারণে দেরি করে দোকান খুলেছি।’