সরকারি কর্মচারীরা জাতীয় বেতনকাঠামো ২০১৫ অনুযায়ী বেতন-ভাতা পান, যে কাঠামো কার্যকর হয়েছে ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে। সরকারি চাকরিতে ২০টি ধাপ (গ্রেড) রয়েছে। প্রথম ধাপে বেতন-ভাতা পান সচিবেরা। ২০ ধাপের মধ্যে তাঁদের মূল বেতনই নির্ধারিত ৭৮ হাজার টাকা। আর শেষ অর্থাৎ ২০তম ধাপের মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী ওই দিন বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী যাঁরা আছেন, তাঁদের বিশেষ বেতন হিসেবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ আপৎকালীন সময়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। অর্থমন্ত্রী আশা করি বিষয়টি গ্রহণ করবেন। আমরা ৫ শতাংশ মূল বেতন বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে তাঁদের দেব।’
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেওয়ায় ৫ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা হিসেবে সরকারি কর্মচারীরা বেতনের সঙ্গে মাসে মাসে পাবেন। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে ঈদের পর কাজ শুরু করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। যখনই প্রজ্ঞাপন জারি হোক, বাড়তি প্রণোদনা জুলাই মাস থেকেই পাবেন সরকারি কর্মচারীরা। বিদ্যমান বেতনকাঠামো অনুযায়ী ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে তাঁদের ৫ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, মূল বেতনকে ভিত্তি ধরে হিসাব করে নেওয়া যায় কোন ধাপে কত বেতন বাড়বে। যেমন স্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) পাশাপাশি প্রথম ধাপের সরকারি কর্মচারীর জন্য ৭৮ হাজার টাকার ৫ শতাংশ হিসাবে বাড়তি প্রণোদনা যোগ হবে ৩ হাজার ৯০০ টাকা।
দ্বিতীয় ধাপের মূল বেতন শুরু হয় ৬৬ হাজার টাকা দিয়ে। এ ধাপে প্রতিবছর ৫ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির পর শেষ মূল বেতন দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ৪৯০ টাকা। শুরুর মূল বেতনকে ভিত্তি করলে প্রণোদনা পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। আর শেষ মূল বেতনকে ভিত্তি ধরলে প্রণোদনা যোগ হবে ৩ হাজার ৮২৫ টাকা।
তৃতীয় ধাপে শুরুর মূল বেতন ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা অনুযায়ী প্রণোদনা পাওয়া যাবে ২ হাজার ৮২৫ টাকা।
ঠিক এভাবে শুরুর মূল বেতন ধরে হিসাব করে দেখা যায়, চতুর্থ ধাপে ২ হাজার ৫০০ টাকা, পঞ্চম ধাপে ২ হাজার ১৫০ টাকা, ষষ্ঠ ধাপে ১ হাজার ৭৭৫ টাকা, সপ্তম ধাপে ১ হাজার ৪৫০ টাকা, অষ্টম ধাপে ১ হাজার ১৫০ টাকা, নবম ধাপে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং দশম ধাপে ৮০০ টাকা বাড়বে।
রাষ্ট্রের চোখে সবাই ‘সরকারি কর্মচারী’ হলেও অর্থ বিভাগ প্রথম থেকে দশম ধাপ পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীদের ‘কর্মকর্তা’ হিসেবে গণ্য করে থাকে। আর একাদশ থেকে ২০তম ধাপের সরকারি কর্মচারীদের গণ্য করা হয় ‘কর্মচারী’ হিসেবে।
এবার দেখে নেওয়া যাক, শুরুর মূল বেতন অনুযায়ী অর্থ বিভাগের ভাষায় কর্মচারীদের কারা কত টাকা বাড়তি প্রণোদনা পাবেন। হিসাব করে দেখা যায়, একাদশ ধাপে প্রণোদনা পাওয়া যাবে ৬২৫ টাকা, দ্বাদশ ধাপে ৫৬৫ টাকা, ত্রয়োদশ ধাপে ৫৫০ টাকা, চতুর্দশ ধাপে ৫১০ টাকা, পঞ্চদশ ধাপে ৪৮৫ টাকা, ষষ্ঠদশ ধাপে ৪৬৫ টাকা, সপ্তদশ ধাপে ৪৫০ টাকা, অষ্টাদশ ধাপে ৪৪০ টাকা, উনবিংশতম ধাপে ৪২৫ টাকা এবং শেষ অর্থাৎ ২০তম ধাপে ৪১২ টাকা ৫০ পয়সা।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ইনক্রিমেন্ট পেয়ে অনেক কর্মচারী তাঁর নিজের বেতন স্কেলের চেয়ে অনেক উঁচু ধাপের মূল বেতনের সঙ্গে তুলনীয় বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের প্রণোদনাও সে অনুযায়ী হিসাব হবে।
উদাহরণস্বরূপ ২০তম ধাপের শুরুর মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা হলেও এ ধাপের শেষের মূল বেতন ২০ হাজার ১০০ টাকা। সে হিসাবে ওই ধাপের কর্মচারী প্রণোদনা পাবেন ১ হাজার ৫ টাকা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও সমমর্যাদার সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে তাঁরা প্রণোদনা পাবেন ৪ হাজার ৩০০ টাকা। আর জ্যেষ্ঠ সচিব ও সমমর্যাদার সরকারি কর্মচারীরা নির্ধারিত ৮২ হাজার টাকার ভিত্তিতে প্রণোদনা পাবেন ৪ হাজার ১০০ টাকা।
অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে সবার বেতন বৃদ্ধি হয় না। যেমন প্রথম ধাপে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি নেই। দ্বিতীয় ধাপে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে ৪ শতাংশ, পঞ্চম ধাপে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ থেকে ২০তম গ্রেডে ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি হয়।
বাজেট উপস্থাপনের আগে গত ১৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয় ৭৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ সালের বাজেট সংক্ষিপ্ত-সার অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে সর্বমোট ৮১ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা।