নয়টি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে।
সরকার চাইলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করতেই পারে। এ জন্য অবশ্যই পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতের সব ধাপে যে খরচ, তার প্রকৃত হিসাব বিবেচনায় নিতে হবে। খরচের প্রকৃত হিসাব না নিয়ে দর নির্ধারণ করা হলে পণ্যের সরবরাহে প্রভাব পড়তে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে সংকট চলছে। আমরাও এর বাইরে নই। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দর কমলেও ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে গেছে। তাতে খরচও বেড়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ডলারের দর ৯৫ টাকা।
তবে পণ্য আমদানিতে প্রতি ডলারের দাম গড়ে ১০৮ টাকা শোধ করতে হচ্ছে আমাদের। এখন যদি পণ্যের দাম নির্ধারণে ডলারের বিনিময় হার ৯৫ টাকা বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে প্রকৃত খরচের হিসাবের সঙ্গে তা মিলবে না।
বিশ্ববাজার থেকে পণ্য আমদানির পর কারখানা বা গুদামে নেওয়া এবং উৎপাদনের পর বাজারজাত করা পর্যন্ত ধাপে ধাপে খরচ বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সয়াবিন, পাম তেল, চিনি ও গম প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করা হয়। বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দরের সঙ্গে পরিবহন, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে আলাদা খরচ রয়েছে।
তাই পণ্যের দাম নির্ধারণে শুধু বিশ্ববাজারের কমোডিটি এক্সচেঞ্জের দর বিবেচনায় নিলে সেটি ঠিক হবে না। আবার উৎপাদনের ক্ষেত্রেও খরচ কম-বেশি হয়। যেমন কোনো কারখানার পূর্ণ সক্ষমতা অনুযায়ী চালু রাখা গেলে খরচ যা হবে, সক্ষমতার কম ব্যবহার হলে খরচ বেশি হবে। বর্তমানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংকটে কারখানা পূর্ণ সক্ষমতা অনুযায়ী চলছে না। তাতেও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
এখন যেকোনো তথ্য সহজেই জানা যায়। আমদানিও করতে পারে যে কেউ। মুক্তবাজারের এই যুগে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা কার্যত সাংঘর্ষিক। এরপরও দর নির্ধারণ যেন প্রকৃত খরচের হিসাবে নির্ধারিত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
নিত্যপণ্য নিয়ে কেউ কারসাজি করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে—সেটা আমরাও চাই। আমার মনে হয়, তাতে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। তবে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখানো উচিত নয়। কারণ, ভয়ভীতিতে পণ্যের প্রবাহ সংকুচিত করতে পারে। পণ্যের সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে, সেদিকে সরকারের নজর দিতে হবে।
মোস্তফা কামাল, চেয়ারম্যান, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই)