চার বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর নাবিক, পাইলট ও কেবিন ক্রুদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করেছে সরকার। শুধু তা–ই নয়, বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমাও তুলে নেওয়া হয়েছে। ৪ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নতুন করে এ সুযোগ দেয়। কিন্তু প্রজ্ঞাপনে ‘অনিবাসী’ শব্দটি থেকে যাওয়ায় এই বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করছেন নাবিকেরা। প্রজ্ঞাপনটি ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর।
সরল সুদে মুনাফা দেওয়ার ভিত্তিতে দেশে ১৯৮১ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড চালু করা হয়। ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড বিধি ১৯৮১ (সংশোধিত ২৩ মে ২০১৫) অনুযায়ী এ বন্ডে যেকোনো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ ছিল।
কোভিডে-১৯-এর প্রকোপ চলাকালীন ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর আইআরডি এক প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করে দেয় যে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের সমন্বিত বিনিয়োগসীমা এক কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হবে। একই সময়ে নাবিক, পাইলট ও কেবিন ক্রুদের এই বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৭ মাসের মাথায় ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের ঊর্ধ্বসীমা উঠিয়ে নেওয়া হয়। ফলে দুই বন্ডে যেকোনো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা যাচ্ছিল। তবে বহাল থেকে যায় ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগসীমা। শুধু তা–ই নয়, এ বন্ডের অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বিনিয়োগের সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সহসভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন কাদ্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্ধ করে দেওয়ার পর ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ চেয়ে আমরা দাবি জানিয়ে আসছিলাম। সরকার দাবি মানলও। প্রজ্ঞাপন জারির আগে আইআরডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এই ‘অনিবাসী’ শব্দ বাদ দেওয়ার অনুরোধও জানিয়ে এসেছিলাম। আমাদের ধারণা, শব্দটি ভুলে থেকে গেছে এবং সে কারণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।’
বিএমএমওএ সম্প্রতি আইআরডিতে গিয়ে বৈঠক করে সুযোগটি পুনর্বহালের দাবি জানায়। বিএমএমওএ যুক্তি দিয়ে বলে, এটি অযৌক্তিকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড বা অবসরোত্তর কোনো সুবিধা নাবিকদের নেই। বাংলাদেশি একজন মেরিন কর্মকর্তা যখন বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে অবস্থান করেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তখন তিনি ওই দেশের আওতায় থাকেন। সাধারণত ৪ থেকে ৯ মাসের চুক্তি হয় তাঁদের। চাকরির পূর্ণ মেয়াদকালে তাঁর পক্ষে নির্দিষ্ট কোনো দেশে অবস্থানের প্রমাণ দেখানো সম্ভব নয়। অথচ প্রজ্ঞাপনটি এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে মনে হতে পারে, বিনিয়োগ করতে গেলে তাদের অনিবাসী অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দেশে বসবাস করতে হবে।
বিএমএমওএ আরও বলেছে, জাহাজে যোগ দেওয়া থেকে শুরু করে জাহাজ থেকে নামা পর্যন্ত সংরক্ষিত সব তথ্য আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ দলিল এবং বিশ্বের সব দেশে তা স্বীকৃত। ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড বিধি ১৯৮১ (সংশোধিত ২০১৫) অনুযায়ী ওয়েজ আর্নার্সের সংজ্ঞা ও বন্ড কেনার যোগ্যতা অনুযায়ী নাবিকেরা এই বন্ড কিনতে পারেন।
নাবিক, পাইলট ও কেবিন ক্রুদের এ বন্ডে বিনিয়োগের স্বার্থে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্প্রতি আইআরডি সচিবকে দেওয়া চিঠিতে বলেছিল, প্রবাসী আয়প্রবাহের পাশাপাশি প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়াতে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়া দরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও তফসিলি ব্যাংকের বিদেশি ও অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখায় বন্ড কেনা যায়। এই বন্ডের মুনাফা আয়করমুক্ত। বন্ডের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার সুযোগও আছে। এ ছাড়া বন্ড কিনতে ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রায় (এফসি) হিসাব থাকারও বাধ্যবাধকতা নেই।
এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী (ওয়েজ আর্নার) নিজে। ওয়েজ আর্নার তাঁর মনোনীত ব্যক্তির নামেও এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত সরকারের কর্মচারীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে। এতে বিনিয়োগ করলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা আছে।
বিএমএমওএর আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে আইআরডি সচিব মো. আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেশাজীবীদের নাম উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বন্ডে বিনিয়োগে কোনো ঝামেলা হওয়ার কথা না। যদি ঝামেলা হয়, আমরা দেখব। প্রয়োজনে সংশোধনী বা স্পষ্টিকরণ দেওয়া হবে।’