প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সীমা তুলে নিয়েছে সরকার। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) আজ রোববার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যত ইচ্ছা তত ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড কিনতে পারবেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে এত দিন যত খুশি বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল। এ তালিকায় এখন যুক্ত হলো ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড।
আইআরডির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রবাসী আয় দিয়ে একবার কেউ ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড এক মেয়াদে কিনলে পরপর দুই মেয়াদের জন্য পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হবে। অর্থাৎ তিন মেয়াদে মোট ১৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা যাবে।
বিদেশি মালিকানাধীন শিপিং ও বিমান বা এয়ারওয়েজ কোম্পানির বিদেশের অফিসে চাকরিরত অনিবাসী বাংলাদেশি মেরিনার, পাইলট ও কেবিন ক্রুরা ওয়েজ আর্নার্স বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন।
দেশে ১৯৮১ সালে পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ-আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড চালু করা হয়। এ বন্ডে মুনাফা পাওয়া যায় সরল সুদে। ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড বিধি ১৯৮১ (সংশোধিত ২৩ মে ২০১৫) অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। কোভিড-১৯–এর প্রকোপ চলাকালে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর আইআরডি এক প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করে দেয় যে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের সমন্বিত বিনিয়োগসীমা এক কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হবে।
তবে ১৭ মাসের মাথায় ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের ঊর্ধ্বসীমা উঠিয়ে নেওয়া হয়। ফলে যেকোনো পরিমাণ বিনিয়োগ এই দুই বন্ডে আসছে। তবে বহাল থেকে যায় ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডের বিনিয়োগসীমা। এ বন্ডের অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বিনিয়োগের সুযোগ ছিল না। ফলে আগে বিনিয়োগ করা অর্থ প্রবাসীরা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছিলেন।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দুই মাস আগে আইআরডি সচিবকে এক চিঠিতে বলেছে, প্রবাসী আয়ের প্রবাহের পাশাপাশি প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়াতে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বাতিল বা শিথিল করা দরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও তফসিলি ব্যাংকের বিদেশি ও অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখায় এসব বন্ড কেনা যায়। এ বন্ডের মুনাফা আয়করমুক্ত। আবার বন্ডের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার সুযোগও আছে। এ ছাড়া বন্ড কিনতে ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রায় (এফসি) হিসাব থাকারও বাধ্যবাধকতা নেই।
এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী (ওয়েজ আর্নার) নিজে। ওয়েজ আর্নার তাঁর মনোনীত ব্যক্তির নামেও এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত সরকারের কর্মচারীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে। এতে বিনিয়োগ করলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা রয়েছে।
মেয়াদ পূর্তির আগে বন্ডধারীর মৃত্যু হলে তাঁর মনোনীত নমিনি বা ব্যক্তিকে যে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়, সেটাই হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা। মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা অবশ্য ২০ লাখ টাকার বেশি দেওয়া হয় না এবং বন্ডধারীর বয়সও হতে হয় ৫৫ বছরের নিচে। নমিনিকে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধাটি নিতে গেলে বন্ডে বিনিয়োগকারী মারা যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হয়। বন্ডধারীর মৃত্যুর পর বন্ডের মেয়াদপূর্তিতে আসল ও মুনাফা পাবেন তাঁর উত্তরাধিকারীরা।
বন্ডে ১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা ১২ শতাংশ হলেও ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১১ শতাংশ, ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি পর্যন্ত ৯ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।