আয়কর রিটার্ন দাখিল
আয়কর রিটার্ন দাখিল

সঞ্চয়পত্র কেনা ছাড়াও আর কীভাবে কর কমাতে পারেন

কর কমাতে কে না চায়? দুষ্ট করদাতারা কর ফাঁকি দেন। তবে বৈধ পথেও কর কমানোর সুযোগ আছে। এ জন্য আপনাকে পথ খুঁজতে হবে। সারা বছরের আয় থেকে একটু একটু জমিয়ে বছরের শেষ দিকে কোথাও বিনিয়োগ করুন। দেখবেন, আপনাকে কম কর দিতে হচ্ছে। করবছরে বিনিয়োগ করেই বৈধ উপায়ে আপনি কর কমাতে পারেন। তবে আপনাকে একটু কৌশলী হতে হবে।

চলতি অর্থবছর শেষ হতে বাকি আছে আর দুই মাসের কিছুটা বেশি। এখন থেকেই আপনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করুন এবং বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে থাকুন। এই বিনিয়োগ আপনার কর কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে। কীভাবে কর কমবে, তা দেখা যাক।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কিছু খাত বলে দিয়েছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে আপনি করছাড় বা কর রেয়াত পাবেন।

একজন করদাতা তাঁর বছরের পুরো আয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। এই সুবিধার আওতায় আপনার বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থ করছাড় পাবেন। তব করছাড়ের পরিমাণ কোনোভাবেই ১০ লাখের বেশি হবে না।

একদম সাধারণ করদাতাদের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনা কিংবা ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) করা হলো কর কমানোর অন্যতম সহজ কৌশল। সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে আপনি বেশি মুনাফা পেতে পারেন, আবার আয়করে ছাড়ও পাবেন। অন্যদিকে আপনি মাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস করলেও সেই টাকার ওপর করছাড় পাবেন। আবার দুটো খাতেই যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারেন।
নিয়ম হলো, করছাড়ের সুবিধা পেতে একজন করদাতা তাঁর বছরের পুরো আয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। এই সুবিধার আওতায় আপনার বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ পরিমাণ অর্থ করছাড় পাবেন। তবে করছাড়ের পরিমাণ কোনোভাবেই ১০ লাখের বেশি হবে না।

ধরুন, গত জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত আপনি ১০ লাখ টাকা উপার্জন করেছেন। পুরোটাই আপনার করযোগ্য আয়। আপনি এই আয়ের ২০ শতাংশ বা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। আপনি সারা বছর একটু একটু খরচ বাঁচিয়ে দুই লাখ টাকাই বিনিয়োগ করলেন। তাহলে আপনি আপনার কর থেকে ৩০ হাজার টাকা (বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ হিসেবে) ছাড় পাবেন।

বিনিয়োগের খাতগুলো হলো সঞ্চয়পত্র; স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চার ক্রয়; জীবনবিমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ এবং সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে চাঁদা। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস করলেও কর রেয়াত পাবেন। এসব পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার ওপর এই করছাড় দেওয়া আছে।

এবার দেখা যাক, আপনি বিনিয়োগ না করলে কত কর হতো। বর্তমান নিয়ম অনুসারে, প্রথম সাড়ে তিন লাখ টাকার জন্য কোনো কর নেই। এর মানে, আপনার সাড়ে ছয় লাখ টাকার ওপর কর বসবে। সেই টাকার প্রথম ১ লাখ টাকার ৫ শতাংশ হারে কর ৫ হাজার টাকা। পরের ৩ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে প্রদেয় কর ৩০ হাজার টাকা। বাকি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১৫ শতাংশ হারে সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে করের পরিমাণ হবে সাড়ে ৭২ হাজার টাকা।

কিন্তু আপনি যেহেতু বিনিয়োগ করেছেন, তাই আপনি ৩০ হাজার টাকা ছাড় পাবেন। বিনিয়োগের কর রেয়াতের কারণে আপনার কর দাঁড়াবে সাড়ে ৪২ হাজার টাকা। শুধু বিনিয়োগ করেই এতটা ছাড় পাচ্ছেন আপনি।

যেসব খাতে বিনিয়োগ করতে হবে

সঞ্চয়পত্র ছাড়াও করছাড় নেওয়ার জন্য মোট নয়টি খাত ঠিক করে দিয়েছে এনবিআর। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে করছাড় মেলে—এটি সচেতন করদাতারা জানেন। এমন আরও আটটি খাত আছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে আপনি করছাড় পেতে পারেন। এগুলো হলো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চার ক্রয়; জীবনবিমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিলে দেওয়া চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ এবং সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে চাঁদা।

এর পাশাপাশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস করলেও কর রেয়াত পাবেন। এসব পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার ওপর এই করছাড় দেওয়া আছে।