ভবিষ্যৎ সব সময়ই অনিশ্চিত। দুর্ঘটনাও কখনো বলে-কয়ে আসে না। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে ভালো সুরক্ষা দিতে পারে বিমা। বিমা হতে পারে আপনার জন্য অন্যতম বিনিয়োগের খাতও। জীবনবিমা নিজের জীবনের এবং পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সুরক্ষা দিয়ে থাকে। বিমাগ্রহীতা প্রতি মাসে অল্প অল্প প্রিমিয়াম দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ভালো রিটার্ন পেতে পারেন। তবে জীবনবিমা করার কথা এলেই প্রথমে যে বিষয়টা মাথায় আসে তা হলো, কোনো দুর্ঘটনা হলে আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়।
যেমন যিনি বিমা করেছেন, তাঁর পলিসি কার্যকর থাকার সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হলে তিনি বিমার সম্পূর্ণ টাকা পেয়ে যাবেন। ধরুন, বিমাগ্রহীতা ১০ লাখ টাকার একটি পলিসি নিয়েছেন। তিনি মাসিক ৫ হাজার ৫০০ টাকা করে তিন মাস প্রিমিয়াম দেওয়ার পর হঠাৎ মারা যান। যদিও তিনি তিন মাসে মোট ১৬ হাজার ৫০০ টাকা জমা দিয়েছেন, তারপরও তাঁর মনোনীত নমিনি বিমা পলিসির সম্পূর্ণ ১০ লাখ টাকাই পাবেন।
এ ছাড়া বিমাগ্রহীতা বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা যেকোনো সময় অসুস্থ হলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বিমা কোম্পানির কাছ থেকে পেতে পারেন। অন্যান্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগ খাতের সঙ্গে বিমার পার্থক্য হলো, আপনি অন্যান্য খাতে যখনই সঞ্চয় করা বন্ধ করে, দেবেন তখনই আপনার সঞ্চয় ও বিনিয়োগ থেমে যাবে। কিন্তু জীবনবিমা গ্রহীতা যদি মাত্র কয়েক মাসের প্রিমিয়াম দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলেও তাঁর পরিবার বিমা পলিসির সম্পূর্ণ টাকা পাবে।
তবে বিমা নিয়ে অনেকের মনেই ভয় থাকে। বিমার টাকা ঠিকমতো পাওয়া যাবে কি না, জমা টাকা মার যাবে কি না ইত্যাদি নিয়ে। এ ভয় থেকেই সাধারণ মানুষ বিমা করতে আগ্রহী হন না। তবে আপনি যদি অন্য বিমাপ্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করতে না পারেন, তাহলে সরকার পরিচালিত ডাকঘরেই জীবনবিমা করতে পারেন। এতে বিমার টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবে না। তবে সরকারি বিমার পাশাপাশি অনেক বেসরকারি বিমাপ্রতিষ্ঠানও দেশে বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করছে।
আপনি যদি বিমা এজেন্টের কাছে প্রিমিয়ামের টাকা জমা দেন, তাহলে তিনি বিশ্বস্ত কি না, তা আগে নিশ্চিত হয়ে নেবেন। তবে প্রিমিয়াম হিসেবে নগদ টাকা না দেওয়াই ভালো। যদি নগদ টাকা প্রিমিয়াম হিসেবে দিতেই হয়, তাহলে এজেন্টের সঙ্গে গিয়ে বিমা কোম্পানির কাছ থেকে জমা রসিদ বুঝে নেবেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় ‘অ্যাকাউন্ট পেয়ি’ চেকের মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধ করা এবং চেক ইস্যু করবেন বিমা কোম্পানির নামে। এ ছাড়া সরাসরি আপনার ব্যাংক হিসাব থেকে বিমা কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা করতে পারবেন। এ জন্য বিমা কোম্পানির একটি নির্ধারিত ফরম থাকে। এ ছাড়া বিমা কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকেও পলিসি নম্বর দিয়ে যাচাই করা যায় বিমা পলিসি সচল আছে কি না।
বিমা পলিসি থেকে রিটার্ন কেমন আসবে তা আগে থেকে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। যেমন বিমাগ্রহীতা কোনো কারণে মারা গেলে বিমার সম্পূর্ণ টাকা পাওয়া যায়। আবার বিমাগ্রহীতা যদি ১৮ বছর মেয়াদি বিমা পলিসি নেন এবং এর মধ্যে যদি অসুস্থ হন, তাহলেও নির্ধারিত হারে টাকা পাবেন। তবে বিমা থেকে রিটার্ন কেমন আসবে, তা আগে থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় না। অনেকে জানতে চান, বিমাগ্রহীতা যদি বিমা পলিসির মেয়াদের আগে কোনো টাকা না তোলেন, তাহলে মেয়াদান্তে কেমন রিটার্ন পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রেও বিমা কোম্পানিগুলো তেমন নিশ্চয়তা দেয় না। তবে বিমা কোম্পানির সঙ্গে কথা বললে একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
ধরুন, আপনি ৫ লাখ টাকার ১৮ বছর মেয়াদি একটি বিমা পলিসি করেছেন এবং ১৮ বছর পর আপনি ৮ লাখ টাকা পেয়েছেন। তার মানে ১৮ বছরে ৫ লাখ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে ৩ লাখ টাকা বোনাসসহ মোট ৮ লাখ টাকা পেয়েছেন। যে ৩ লাখ টাকা বোনাস পেয়েছেন, তা থেকে ৫ শতাংশ কর কর্তন করে বাকি টাকা আপনাকে দেওয়া হবে।
তবে করদাতারা বিমা প্রিমিয়াম হিসেবে যে টাকা দিয়েছেন, তার ওপর কর রেয়াত দাবি করতে পারেন। তাই করদাতারা বিমা করলে বেশি রিটার্ন পেয়ে থাকেন। আইনগতভাবে কর দায় কমানোর সহজ উপায় হচ্ছে বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত দাবি করা। তবে সব খাতে বিনিয়োগ করে কর রেয়াত দাবি করা যায় না। শুধু আয়কর আইনে যে বিনিয়োগ খাতগুলো সম্পর্কে বলা আছে, কেবল সেই খাতগুলোতে বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে জীবনবিমা একটি ভালো বিনিয়োগ খাত। এ খাতে বিনিয়োগ করে কর রেয়াত দাবি করা যায়।
[জসিম উদ্দিনের লেখা ‘স্মার্ট মানি হ্যাকস: সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সেরা প্ল্যান’ বই অবলম্বনে]