যাঁদের বয়স ৫০ বছরের বেশি, সেই সব নাগরিকের সঞ্চয়ের ওপর বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। কোনো কোনো ব্যাংক ১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি মুনাফা দিচ্ছে। আবার কেউ বিনা খরচে হিসাব পরিচালনা ও কার্ড সুবিধা দিচ্ছে। উদ্দেশ্য জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের পাশে থাকা।
অনেক দেশে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য নানা ধরনের আর্থিক পণ্য থাকলেও বাংলাদেশে তেমন একটা দেখা যায় না। তবে দেশের অনেক ব্যাংকে রয়েছে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বিশেষ হিসাব খোলার সুবিধা। কোনো ব্যাংক ৫০ বছর ঊর্ধ্ব, আবার কেউ ৬০ বছর ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের এই সেবা নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। অবসরজীবন যাতে একটু ভালো কাটে, সে জন্য এই উদ্যোগ। মূলত জমা টাকার ওপর বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
পূবালী ব্যাংকে সিনিয়র সিটিজেন ডিপোজিট হিসাবে ৫৯ বছর বা ঊর্ধ্বের যেকোনো বাংলাদেশি বিশেষ হিসাব খুলতে পারেন। এই হিসাবে প্রাথমিক জমার পরিমাণ ১০ লাখ টাকা। এতে ৬ মাসের স্থায়ী আমানতের জন্য যে সুদহার প্রচলিত, তার চেয়ে ১ শতাংশ বেশি সুদ দেয় পূবালী ব্যাংক। রয়েছে মাসভিত্তিক মুনাফা উত্তোলনের সুযোগ। এ ছাড়া এই হিসাব খোলার এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর এটি সঞ্চয়ী হিসাবের মতো ব্যবহার করা যাবে। হিসাবটির জন্য মাশুল দিতে হয় না। রয়েছে জমা টাকার ৮০ শতাংশ ঋণ নেওয়ার সুযোগ।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রবীণদের একটু ভালো রাখতে আমাদের এই উদ্যোগ। কারণ, এই সময়ে তাঁদের আয় থাকে না, জমানো টাকার ওপরই অনেককে চলতে হয়। আবার এই সময়ে চিকিৎসার জন্যও অনেকের খরচ বেড়ে যায়।’
ব্র্যাক ব্যাংকে রয়েছে ৫০ ঊর্ধ্ব নারীদের জন্য বিশেষ হিসাব খোলার সুযোগ, যা ‘তারা গোল্ডেন বেনিফিট সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ নামে পরিচিত। মাত্র ৫০০ টাকা দিয়ে এই হিসাব খোলা যায়। এই হিসাবে প্রতি মাসে মুনাফা দেয় ব্যাংক। পাশাপাশি ডেবিট কার্ডের জন্য প্রথম বছরে কোনো মাশুল নেওয়া হয় না। এই হিসাবে ১ লাখ টাকার কম থাকলে ৬০০ টাকা মাশুল দিতে হয়, বেশি টাকা থাকলে মাশুল লাগে না। সপ্তাহের এক দিন ডেবিট কার্ডে কেনাকাটায় দেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ রিওয়ার্ড পয়েন্ট।
এ ছাড়া নারীদের এই বিশেষ হিসাব খোলার সময় দেওয়া হচ্ছে জীবনযাত্রা পণ্য, জুয়েলারি ও বিউটি পারলারে ছাড়ের সুযোগ। এই হিসাবে ৩০ হাজার টাকা জমা থাকলেই বিনা মূল্যে বিমা-সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংক। পাশাপাশি দেশের হাসপাতালে ৪০ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুর, ভারত ও থাইল্যান্ডের হাসপাতালে ২০ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ। হিসাবগ্রহীতা মারা গেলে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে নমিনিকে। হিসাবধারী কোনো দুর্ঘটনায় মারা গেলে নমিনি পাবেন ৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ। অসুস্থ হলে প্রতিবার চিকিৎসার জন্য ১৮ হাজার টাকা পাবেন হিসাব গ্রহীতা।
ব্র্যাক ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব রিটেইল ব্যাংকিং মো. মাহীয়ুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রবীণদের জন্য আমাদের রয়েছে বিশেষ আমানত পণ্য। এসব পণ্যে বেশি মুনাফা, বিনা মূল্যে বিমা-সুবিধা, চিকিৎসায় ছাড়সহ নানা সুবিধা রয়েছে। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা প্রবীণদের পাশে থাকতে চাই।’
ইস্টার্ন ব্যাংকে রয়েছে ৫০ ঊর্ধ্ব নাগরিকদের বিশেষ হিসাব খোলার সুযোগ। এতে বেশি সুদের পাশাপাশি রয়েছে ৫০ হাজার টাকা জমা হলেই সুদ পাওয়ার সুবিধা। হিসাবধারী পাচ্ছেন বিনা খরচে বিমা-সুবিধা। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ, অসুস্থতায় প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ, বছরে বিনা খরচে ২টি পে-অর্ডার, দিনে ইস্টার্ন ব্যাংকের এটিএম থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা খরচে টাকা তোলার সুযোগ। এ ছাড়া ব্যাংকের লকার অর্ধেক খরচে ব্যবহার করতে পারবেন এসব গ্রাহক।
বেসরকারি ব্যাংকের মতো সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বিশেষ হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে। ৫০০ টাকা জমা দিয়ে এই হিসাব খোলা যায়। রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে সুদের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি সুদ দিচ্ছে এই হিসাবে। রূপালী ব্যাংক প্রথমবারের চেক বই ও ডেবিট কার্ড দিচ্ছে বিনা মূল্যে।