সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। আর পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড কিনলে পাবেন ১২ শতাংশ মুনাফা। আপনাকে প্রতি ছয় মাস অন্তর মুনাফা প্রদান করা হবে। তবে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে থাকলে এবং কিছু সীমা অতিক্রম করলে ধীরে ধীরে মুনাফার পরিমাণ কমতে থাকবে।
আপনি কি প্রবাসে, মানে বিদেশে থাকেন? তাহলে শুনুন, কাজের খোঁজে আপনার মতো বিদেশ যাওয়া মানুষ তথা প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা এখন প্রায় এক কোটি। আপনারা প্রবাসীরা বেতন বা মজুরির একটা অংশ দেশে পরিবারের জন্য পাঠান, বাকিটা নিজেরা খরচ করেন—এটা জানা কথা।
কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এভাবে যদি আয়ের পুরোটাই খরচ করে ফেলেন, অর্থাৎ আয় থেকে যদি কিছু সঞ্চয় না করেন, তাহলে যখন দেশে ফিরবেন, তখন কী হবে? সে জন্য ভবিষ্যতের কথা ভেবে আপনি চাইলে সব আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়েও আয়ের একটি অংশ সঞ্চয় করতে পারেন।
এটি করতে হয় সরকারি ‘ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে’ বিনিয়োগ করতে পারেন। সেটি করলে ৫–১০ বছর পর যখন আপনি দেশে ফিরে আসবেন, তখন দেখবেন, একটা বড় অঙ্কের টাকা জমা হয়ে আছে। এই টাকা দিয়ে আপনি নতুন করে আবার কিছু করতে পারবেন।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। আর পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড কিনলে পাবেন ১২ শতাংশ মুনাফা। আপনাকে প্রতি ছয় মাস অন্তর মুনাফা প্রদান করা হবে। তবে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে থাকলে এবং কিছু সীমা অতিক্রম করলে ধীরে ধীরে মুনাফার পরিমাণ কমতে থাকবে।
আপনার মতো প্রবাসীদের জন্যই চালু করা হয়েছে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড। এতে আপনি যদি বিনিয়োগ করেন, তাহলে ভালো কয়েকটি সুবিধা পাবেন। যেমন এই বন্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে আপনি সবচেয়ে বেশি হারে মুনাফা পাবেন, যা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেও পাবেন না। এর বিপরীতেই মিলবে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ মুনাফা। আর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে মুনাফা পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বন্ডটির আরেকটা বড় সুবিধা হলো, আপনি এই বন্ড থেকে ছয় মাস পরপর যে মুনাফা পাবেন, তা থেকে কোনো কর কাটা হবে না। অর্থাৎ আপনি মুনাফার সম্পূর্ণ টাকাটাই পেয়ে যাবেন। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ কর কেটে রেখে বাকি টাকা দেওয়া হয়।
আবার আপনি যদি কোনো ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট মানে স্থায়ী আমানত প্রকল্পে টাকা রাখেন, তার বিপরীতে পাওয়া মুনাফা থেকে কর কর্তন করা হবে। এতে আপনার আয় কমে যাবে। যেহেতু আপনি দেশের বাইরে থাকেন এবং আপনার এই বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ আছে, তাই আপনি এখানে বিনিয়োগ করে করমুক্ত মুনাফার সুযোগ নিতে পারেন।
সে ক্ষেত্রে আপনি কী সুবিধা পাবেন, তা বলা যাক। ধরুন, আপনি ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাহলে ছয় মাস পর আপনি মুনাফা পাবেন ছয় হাজার টাকা। সহজভাবে বলতে গেলে এক লাখ টাকার জন্য আপনি প্রতি মাসে এক হাজার টাকা মুনাফা পাবেন। যেহেতু কোনো কর কাটা হবে না, তাই মুনাফার পুরো টাকাই আপনাকে দেওয়া হবে।
আপনার বন্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে একাধিক মেয়াদের জন্য এই বন্ডে পুনর্বিনিয়োগের সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া কোনো কারণে যদি অর্থের প্রয়োজন হয়, তাহলে বিনিয়োগকৃত অর্থের বিপরীতে আপনি ঋণও নিতে পারবেন।
আর কোনো কারণে বন্ড হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে ডুপ্লিকেট বন্ড ইস্যু করারও সুযোগ আছে। এ ছাড়া এই বন্ডে বিনিয়োগের জন্য এফসি অ্যাকাউন্ট থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
আপনি ২৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন। পাঁচ বছর মেয়াদি এই বন্ডে আপনি নিজের নামের পাশাপাশি আপনার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, মা-বাবার নামে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে আপনি যতজনের নামেই বিনিয়োগ করেন না কেন, সব মিলিয়ে এক কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে পারবেন না।
আপনি যে দেশে আছেন, ওই দেশে থেকে আপনার নামে বন্ড কিনতে যদি সময় না পান বা আপনার যদি দেশে আসতে অনেক দেরি হয়, তাহলে আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের দ্বারাও এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।
আবার যাঁরা বাংলাদেশে আছেন, আপনার পরিবারের কেউ যদি দেশের বাইরে থাকেন, তাহলে তিনি যে টাকা পাঠিয়েছেন, তা অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ না করে এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের তফসিলি ব্যাংকের শাখা, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি, বাংলাদেশে যেকোনো তফসিলি ব্যাংকের অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখা থেকে এই বন্ড কিনতে পারবেন। অর্থাৎ নিজের সুবিধামতো আপনি দেশে ও বিদেশে দুই জায়গা থেকেই ওয়েজ আর্নার বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন। আপনি যদি বিদেশে থাকেন, তখন দেশে টাকা পাঠানোর জন্য যখন ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসে যাবেন, তখন একই জায়গা থেকে আপনি এই বন্ড কিনতে পারবেন।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। আর পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড কিনলে পাবেন ১২ শতাংশ মুনাফা। আপনাকে প্রতি ছয় মাস অন্তর মুনাফা প্রদান করা হবে। তবে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে থাকলে এবং কিছু সীমা অতিক্রম করলে ধীরে ধীরে মুনাফার পরিমাণ কমতে থাকবে। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ধাপ অনুযায়ী আপনি মুনাফা পাবেন। এবার সেটি জেনে নিন।
ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে ১২ শতাংশ, ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে ১১ শতাংশ, ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাবে। আর ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করলে মুনাফা মিলবে ৯ শতাংশ।
মুনাফা হিসাব করার একটি উদাহরণও রইল আপনার জন্য। ধরুন, আপনি এই বন্ডে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাহলে আপনি প্রথম ১৫ লাখের জন্য ১২ শতাংশ এবং বাকি ৫ লাখের জন্য ১১ শতাংশ হিসাবে মুনাফা পাবেন।
সূত্র: ‘স্মার্ট মানি হ্যাকস: সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সেরা প্ল্যান’।