স্বল্প আয়ের লোকজন তো বটেই, সবাই পথ খোঁজেন কীভাবে আইনের মধ্যে থেকেই আয়কর কম দেওয়া যায়। চাকরিজীবী করদাতাদের প্রতিষ্ঠান উৎসে আয়কর কেটে রাখে। এ ক্ষেত্রে সঠিক খাতে বিনিয়োগ করলে তাঁদের অন্য কোনো আয় না থাকলেও উৎসে কর্তন করা করের টাকা দিয়েই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা করে বিনিয়োগ করতে হবে।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সঠিক ধারণা না থাকায় বেশি পরিমাণে আয়কর দিতে হচ্ছে। জমি বা ফ্ল্যাট, স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) বা আয়কর আইনে অনুমোদিত খাত ছাড়া অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগ করলে আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে না।
যেমন সঞ্চয়পত্রের কথা ধরা যাক। কেউ পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র কিনে প্রথম বছর আয়কর রেয়াত গ্রহণ করেছেন। পরের বছর আর কোনো বিনিয়োগ করেননি। এ ক্ষেত্রে পরের বছর বেশি আয়কর দিতে হবে, এমনকি তাঁর আয় যদি আগের মতোও থাকে। কারণ, নিয়ম অনুসারে সঞ্চয়পত্র যে বছর ক্রয় করা হবে, এই বিনিয়োগের ওপর শুধু সে বছরই আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান ও ধর্মপরায়ণ। এ জন্য অনেকেই প্রতিবছর যাকাত দেন। এ ক্ষেত্রে যদি কেউ যাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩–এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত কোনো দাতব্য তহবিলে যাকাত দেন, তবে তিনি আয়কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন। সাধারণভাবে যাকাত দিলে আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে না। আবার ডিপোজিট পেনশন স্কিম বা ডিপিএসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর রেয়াত পাওয়া যায়। এর বেশি হলে রেয়াত পাওয়া যায় না।
গত ১ জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাঁরা অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করেছেন, শুধু তাঁরাই এ বছর বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত পাবেন। ফলে যাঁরা অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করেননি, তাঁরা এখন থেকে পরিকল্পনা করুন যেন আগামী বছর থেকে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে নিচের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে এবং যথাযথভাবে তা প্রয়োগ করতে হবে। একজন সাধারণ করদাতার কর রেয়াতের জন্য তিনটি বিষয় বিবেচিত হবে। করদাতার মোট নিয়মিত করযোগ্য আয়ের ৩ শতাংশ (কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত করহারের আয় ব্যতীত), বা প্রকৃত অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ, অথবা ১০ লাখ টাকা, এই তিনটির মধ্যে যেটি কম হয়।
বিনিয়োগ বা দানের অনুমোদিত খাত
একজন করদাতার অনুমোদিত বিনিয়োগ ও দানের সম্ভাব্য খাতের মধ্যে রয়েছে—জীবনবিমার প্রিমিয়াম, সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা, কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা এবং সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ড প্রদত্ত চাঁদা।
যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে যেকোনো সিকিউরিটিস ক্রয়ে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে কিংবা বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ করলে অনুমোদিত খাত হিসেবে রেয়াত পাওয়ার সুযোগ থাকবে।
বিভিন্ন অনুদানের মধ্যে জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান, যাকাত তহবিলে দান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোনো দাতব্য হাসপাতালে দান, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে দান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রদত্ত দান, আহসানিয়া ক্যানসার হাসপাতালে দান, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) প্রদত্ত দান, সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) দান করলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া সরকার কর্তৃক অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দান, এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশে দান, ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে দান ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানে অনুদানের ক্ষেত্রেও কর রেয়াতের সুবিধা দেওয়া হয়।
লেখক: আয়কর আইনজীবী ও নির্বাহী পরিচালক, গোল্ডেন বাংলাদেশ।