ভ্যাট দিবস

নতুন আইন চমক দেখাতে পারেনি

গত দুই বছরে নতুন ভ্যাট আইন ভ্যাটদাতাদের যেমন প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, তেমনি এনবিআরও ভ্যাটের সুফল পায়নি।

  • দুই বছরে ভ্যাট বেড়েছে মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা।

  • প্রথম বছরে করোনার কবলে পড়ে আদায় কমেছে।

  • প্রথমে বিনা মূল্যে দেওয়া হলেও, এখন ভ্যাটের মেশিন কিনতে হবে।

ভ্যাট

নতুন ভ্যাট আইন চমক দেখাতে পারেনি। ভ্যাট আদায় তেমন একটা বাড়েনি। আবার নতুন আইনের সুফল পেতে যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, তাতেও গতি নেই। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের হিসাব রাখার জন্য ইলেকট্রনিক ফিসকেল ডিভাইস (ইএফডি) ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে বসেনি। ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে করোনার আঘাতে ভ্যাট আদায় বাড়েনি। অথচ নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ফলে বছরে ১৫-২০ হাজার কোটি টাকা বেশি ভ্যাট আদায় হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে তা হয়নি। গত দুই বছরে নতুন ভ্যাট আইন ভ্যাটদাতাদের যেমন প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, তেমনি এনবিআরও ভ্যাটের সুফল পায়নি।

আগামীকাল শুক্রবার ভ্যাট দিবস। এই দিবস উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সেরা ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

২০১৯ সালের জুলাই মাসে নতুন ভ্যাট আইন চালু হয়। অবশ্য এটি ২০১২ সালের আইন। ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে এর বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও, পরে তা ভেঙে পাঁচটি করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, নতুন ভ্যাট আইন নিষ্ফল উদ্যোগে পরিণত হয়েছে। সংসদে পাস হওয়া আইন থেকে নানা বিচ্যুতি হয়েছে। একাধিক ভ্যাট হারসহ বিভিন্ন খাতে ছাড় দিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে। আইনের সুফল পেতে যে ধরনের অটোমেশন দরকার, তা করা হয়নি। এ ছাড়া উৎপাদক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সার্বিকভাবে ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও এনবিআর—কেউই লাভবান হচ্ছে না।

দুই বছরে ভ্যাট বেড়েছে মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা

২০১৯ সালে নতুন ভ্যাট আইন চালুর সময় এনবিআরের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রতিবছর ১৫-২০ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট বাড়বে, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। প্রথম বছর, অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভ্যাট আদায় বাড়েনি; বরং আড়াই হাজার কোটি টাকা কমেছিল। ওই বছর ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৮৪ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। আগের বছর, অর্থাৎ পুরোনো আইনের আওতায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছিল। বড় যুক্তি হতে পারে, করোনার কারণে ২০২০ সালের এপ্রিল ও মে মাসে রাজস্ব আদায় হয়নি বললেই চলে। কিন্তু নতুন আইনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাট আদায়। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়েই আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়। গত অর্থবছরে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৮৫ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। নতুন আইন চালুর দুই বছরে ভ্যাট আদায় বেড়েছে মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীরগতি ছিল। এ ছাড়া ভ্যাটের মেশিন বসানোসহ অন্যান্য অটোমেশনের কাজও যথাসময়ে হয়নি।

ভ্যাটের মেশিন বসেছে ১% প্রতিষ্ঠানে

বর্তমানে ২ লাখ ৮৮ হাজার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় নিবন্ধন বা ভ্যাট নিবন্ধন আছে। নতুন ভ্যাট আইন চালুর সময় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে ভ্যাটের মেশিন বসানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। আইনটি চালুর এক বছর পর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ভ্যাটের মেশিন বসানো শুরু হয়। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৭৮টি প্রতিষ্ঠানে এই মেশিন বসেছে, যা মোট প্রতিষ্ঠানের ১ শতাংশের কিছুটা বেশি। কিন্তু দুই মাস আগে এই মেশিন সাড়ে ২০ হাজার টাকায় বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হলেও ব্যবসায়ীরা সাড়া দিচ্ছেন না। এ ছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিন আছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে বিনা মূল্যে ভ্যাটের মেশিন দেওয়ার কথা ছিল। এখন বলা হচ্ছে, সাড়ে ২০ হাজার টাকায় কিনে নিতে হবে। কিন্তু চীন থেকে আনা এসব মেশিনের দাম ৮-১০ হাজার টাকা। কেনা দাম জানার অধিকার ব্যবসায়ীদের আছে। আবার ভোগান্তিও কমেনি, বরং বেড়েছে। প্রতি মাসে শত শত মামলা দেওয়া হয়।

অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা যাচ্ছে না। তবে ব্যতিক্রমও আছে, কুমিল্লা ও যশোর ভ্যাট কমিশনারেটের ৯৫ শতাংশের বেশি ব্যবসায়ী অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দেন। বাকি কমিশনারেটগুলোতে অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার হার বেশ কম।