এ দেশের চিকিৎসকদের অনেকেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে বিপুল অঙ্কের টাকা আয় করেন। তাঁদের এই আয় পুরোটাই করযোগ্য। কোনো ছাড় নেই।
এ দেশে পেশাজীবীদের মধ্যে চিকিৎসকদের আয়-রোজগার বেশ ভালো। হাসপাতালের পাশাপাশি প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করেন। এ জন্য চিকিৎসকেরা আলাদা চেম্বারও নেন। কিন্তু বছর শেষে হাসপাতালের বেতনের পাশাপাশি প্রাইভেট প্র্যাকটিস থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা আয় করেন, যা পুরোটাই করযোগ্য। এবার দেখা যাক, চিকিৎসকেরা কীভাবে রিটার্ন জমার সময় আয়-ব্যয় ও করের হিসাব দেবেন।
চিকিৎসক হিসেবে নজরুল ইসলামের বেশ নামডাক আছে। রাজধানীর একটি নামজাদা বেসরকারি হাসপাতালে পূর্ণকালীন চিকিৎসক হিসেবে চাকরি করেন। আবার সন্ধ্যার পর সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রায় প্রতিদিন উত্তরায় নিজস্ব চেম্বারে রোগী দেখেন।
২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত ওই হাসপাতাল থেকে প্রতি মাসে মূল বেতন বাবদ ৫০ হাজার টাকা পান নজরুল ইসলাম। ১২ মাসে বেতন বাবদ প্রাপ্তি মোট ৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া দুটি উৎসব বোনাস (মূল বেতনের সমান) এক লাখ টাকা পান। সঙ্গে বাড়িভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা করে বছরে মোট ৩ লাখ টাকা পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া চিকিৎসা ভাতা বাবদ বছরে ২৪ হাজার টাকা পেয়েছেন।
সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রায় প্রতিদিনই নিজের চেম্বারে রোগী দেখেন নজরুল ইসলাম। বছরে কমবেশি ৩০০ দিন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন তিনি। প্রতি দিন ১০ জন নতুন রোগী ও ২০ জন পুরোনো রোগী দেখেন। নতুন রোগীর কাছ থেকে ৫০০ ও পুরোনো রোগীর কাছ থেকে ২৫০ টাকা নেন। সারা বছরে নতুন রোগীর কাছ থেকে পান ১৫ লাখ টাকার সঙ্গে পুরোনো রোগীদের কাছ থেকে পেয়েছেন আরও ১৫ লাখ টাকা। প্রাইভেট প্র্যাকটিস থেকে নজরুল ইসলামের সব মিলিয়ে আয় ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু চেম্বারের খরচের হিসাবনিকাশ রাখেন না। তাই ওই আয়ের এক-তৃতীয়াংশ চেম্বার পরিচালনার আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে অনুমোদনযোগ্য। সেই হিসাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে আয় হলো ২০ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে নজরুল ইসলামের বার্ষিক আয় দাঁড়াল ৩০ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে থেকে তিনি ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। তবে পুরো টাকার ওপর কর বসবে না। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতায় ছাড় পাবেন।
তাহলে এবার দেখা যাক নজরুল ইসলামের করযোগ্য আয় কত, কোথায় কীভাবে কর ছাড় পাবেন। মূল বেতনের ৬ লাখ টাকা এবং উৎসব বোনাস ১ লাখ টাকার পুরোটাই করযোগ্য। তবে বাড়িভাড়ার ৩ লাখ টাকার পুরোটাই ছাড় পাবেন। কারণ, বাড়িভাড়া হিসেবে বছরে ৩ লাখ টাকা বা মূল বেতনের ৫০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, সেই টাকার ওপর কর বসবে না। এর বেশি হলে বাকি টাকা করের আওতায় চলে আসবে। চিকিৎসা ভাতা হিসেবে পাওয়া ২৪ হাজার টাকার পুরোটাই করমুক্ত। কারণ, চিকিৎসা ভাতা হিসেবে মূল বেতনের ১০ শতাংশ পর্যন্ত বা বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি কম হবে, সেই টাকার ওপর কর ছাড় মেলে। প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পুরো টাকাই করযোগ্য।
নজরুল ইসলামের গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে করযোগ্য আয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৭ লাখ টাকা। এই আয়ের প্রথম ৩ লাখ টাকার ওপর কোনো কর বসবে না। পরবর্তী ১ লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ হারে ৫ হাজার টাকা কর বসবে। পরের তিন লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে ৩০ হাজার টাকা; পরের ৪ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ হারে ৬০ হাজার টাকা এবং পরের পাঁচ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ হারে ১ লাখ টাকা কর বসবে। বাকি বাকি ১১ লাখ টাকার জন্য ২৫ শতাংশ হারে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা কর হবে। সব মিলিয়ে নজরুল ইসলামের করের পরিমাণ ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
কিন্তু এত টাকা তাঁকে কর দিতে হবে না। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার জন্য কর ছাড়া পাবেন। নজরুল ইসলামের মোট করযোগ্য আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থাৎ ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ। কিন্তু নজরুল ইসলাম মাত্র ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। যেহেতু তাঁর বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগের ১০ শতাংশ হারে কর ছাড় পাবেন। বিনিয়োগজনিত কর ছাড়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসক হিসেবে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা কর দিতে হবে।