জেনে নিন

কোন সঞ্চয় কর্মসূচিতে কত সুদ, কত কর

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালু সঞ্চয় কর্মসূচি (স্কিম) বর্তমানে ১১টি। এগুলোর মধ্যে ৪টি সঞ্চয়পত্র, ২টি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাব, ১টি ডাক জীবনবিমা, ১টি প্রাইজবন্ড এবং ৩টি প্রবাসীদের জন্য বন্ড। তবে সব কর্মসূচিতে বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ বা মুনাফার হার এক নয়। সুদের ওপর করহারও ভিন্ন ভিন্ন।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোনো কোনো কর্মসূচিতে সুদ আয় পুরোপুরি করমুক্ত। কোনোটিতে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে কোনো উৎসে কর নেই, তবে এর পর থেকে আছে। আবার কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদের ওপর কর ৫ শতাংশ, এর বেশি হলেই তার দ্বিগুণ অর্থাৎ ১০ শতাংশ।

চার জনপ্রিয় সঞ্চয়পত্র

চার ধরনের সঞ্চয়পত্রে সবচেয়ে বেশি সুদ পেনশনার সঞ্চয়পত্রে। এ হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তবে শুধু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরাই এতে বিনিয়োগ করতে পারেন। এটির ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে অর্জিত সুদের ওপর কোনো উৎসে কর কাটা হয় না। এর বেশি বিনিয়োগের সুদের বিপরীতে উৎসে কর ১০ শতাংশ।

পরিবার সঞ্চয়পত্রে সুদ ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে। তবে বছরভিত্তিক সুদ ভাগ করা আছে। যেমন প্রথম বছর শেষে ৯ দশমিক ৫০, দ্বিতীয় বছর শেষে ১০, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৫০ এবং চতুর্থ বছর শেষে ১১ শতাংশ। ১ লাখ টাকায় প্রতি মাসে সুদ ৯৬০ টাকা। উৎসে কর ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে সুদের ওপর ৫ শতাংশ, এর বেশি বিনিয়োগের সুদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ।

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সুদ ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙালে সুদ ১ম বছর শেষে ৯ দশমিক ৩৫, ২য় বছর শেষে ৯ দশমিক ৮০, ৩য় বছর শেষে ১০ দশমিক ২৫ এবং ৪র্থ বছর শেষে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ সঞ্চয়পত্রেও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ, এর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদের ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ।

তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। যেকোনো শ্রেণি-পেশার নাগরিকই এটি কিনতে পারেন। মেয়াদ তিন বছর। তবে আগেও নগদায়ন করা যায়। সে ক্ষেত্রে সুদের হার কম। যেমন তিন বছর শেষে সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪, দুই বছর শেষে ১০ দশমিক ৫০ এবং এক বছর শেষে ১০ শতাংশ। ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে উৎসে কর ৫ শতাংশ, বিনিয়োগ এর ওপরে গেলেই উৎসে কর ১০ শতাংশ।

প্রবাসীদের জন্য তিন বন্ড

প্রবাসীদের জন্য বন্ড রয়েছে তিনটি। তবে সবচেয়ে বেশি ১২ শতাংশ সুদ ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে। এটি পাঁচ বছর মেয়াদি। ৬ মাস অন্তর সুদ তোলার সুযোগ রয়েছে।

ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড তিন বছর মেয়াদি। এর সুদের হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রবাসীদের জন্য আরেকটি বন্ড রয়েছে, যার নাম ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড। এর সুদের হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

তিনটিরই বিনিয়োগের বিপরীতে পাওয়া সুদ করমুক্ত। এ ছাড়া ১০০ টাকার প্রাইজবন্ডের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর ড্র হয়। এর ওপর উৎসে কর ২০ শতাংশ।

ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে দুই হিসাব

ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় দুটি কর্মসূচি আছে। একটি সাধারণ হিসাব, অন্যটি মেয়াদি হিসাব। দেশের সব শ্রেণি-পেশার বাংলাদেশি নাগরিকই এ দুই কর্মসূচিতে টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে সুদ সরল হারে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মেয়াদি হিসাবের সুদ হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। মেয়াদি হিসাবটি তিন বছরের জন্য। তিন বছরের মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙানোর ক্ষেত্রে এক বছরের জন্য সুদ ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। আর দুই বছরের জন্য ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ দুটির ক্ষেত্রেও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে পাওয়া সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ, এর বেশি বিনিয়োগের সুদের ওপর ১০ শতাংশ।

ডাক জীবনবিমায় পলিসি দুই ধরনের, আজীবন ও মেয়াদি। যেকোনো নাগরিক যেকোনো ডাকঘরে গিয়ে ডাক জীবনবিমা পলিসির আওতায় আসতে পারেন। পলিসির কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। আজীবন বিমার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে বছরে বোনাস পাওয়া যায় প্রতি লাখে ৪ হাজার ২০০ টাকা। আর মেয়াদি বিমার ক্ষেত্রে বছরে প্রতি লাখে পাওয়া যায় ৩ হাজার ৩০০ টাকা বোনাস। এ বোনাস করমুক্ত।