বিশেষজ্ঞরা বলেন, আয় যা–ই হোক না কেন, বুঝে ব্যয় করতে হবে। তবে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে আয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যয় ভাগ করা একটু কঠিন। আবার ঠিক এ কারণেই আগে থেকে বাজেট হিসাব করে নিতে হবে, যেন বিফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে। ব্যক্তিগত আর্থিক পরামর্শ দেওয়ার ওয়েবসাইট দ্য ব্যালেন্সের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন কীভাবে ছয় ধাপে নিজের বাজেট করে আপনার টাকার ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনা করবেন।
ধরে নিই, আপনি আগে কখনো বাজেট করেননি। শুধু আয় এসেছে আর খরচ করেছেন, যা বেঁচেছে তা–ই জমিয়েছেন। বেশ, তাহলে এখন একটা খাতা নিয়ে বসুন। আগের নিয়মেই সব চলুক, শুধু প্রতিদিন কী খরচ হচ্ছে, লিখতে থাকুন। মাস শেষে এই খাতাই বাজেটের প্রাথমিক রোড ম্যাপ হবে।
ধরা যাক, আপনি চাকরি করেন, অফিস আপনাকে মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতন দেয়। এখন ৪০ হাজার টাকা পুরোটাই কি আপনি বাড়ি আনতে পারেন, নাকি কিছু আগেই কেটে নেওয়া হয়? প্রভিডেন্ট ফান্ড, আয়কর অফিস, ক্যানটিনের পাওনা মেটানোর পর হাতে যে টাকা থাকে, সেটাকেই মূল আয় ধরে হিসাব করতে হবে। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আয়কর হিসাব হয় বছর শেষে, তো বছরে একবার এটার চাপ না নিয়ে মাসে মাসেই কিছু টাকা সরিয়ে ফেলতে হবে।
প্রথম ধাপে ব্যয়ের হিসাব করেছিলেন। এরপর যত টাকা বেঁচেছে, পুরোটাই খরচ ধরে সঞ্চয়ের খাতে রেখে দিন। এভাবে সঞ্চয়কে হিসাবে রাখলে একটা নির্দিষ্ট অঙ্ক জমে থাকবে, যা ভবিষ্যতে বড় কাজে খরচ করা যাবে।
কিছু খরচ থাকে দৈনিক, কিছু সাপ্তাহিক, আবার কিছু মাসিক। এই খরচগুলোকে আলাদা করুন। কিছু খরচ আছে যা স্থির, যেমন: বাড়িভাড়া। কিছু খরচ আছে, যা কমানো-বাড়ানো সম্ভব, যেমন বিদ্যুৎ বিল। এগুলো আলাদা করে ফেলুন।
এখন এক দিনের বাজেট থেকে হিসাব শুরু করুন। যেমন এক দিনে আপনার খাওয়ার খরচ, যাতায়াতের খরচ ইত্যাদি লাগে। কোনো কোনো দিন খাওয়ার খরচের কম-বেশি হতে পারে। আবার বৃষ্টি হলে বা যানবাহন চলাচলে কোনো সমস্যা হলে যাতায়াতের খরচ বেড়ে যেতে পারে। কাজেই এই খাতে কিছুটা আপত্কালীন টাকা রাখতে হবে। খরচ হয়ে গেলে তো গেলই, থাকলে সেটা সঞ্চয়ে রাখা যাবে।
আবার উল্টোভাবেও করতে পারেন, বাড়ি ভাড়া, বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচের মতো স্থির ব্যয়গুলো হিসাব করার পর ব্যয়ের জন্য যা থাকবে, তা পরিবর্তনশীল ব্যয়ের মধ্যে বণ্টন করুন। এই ধাপ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, আগের মাসে ঠিক কোন কোন জায়গায় খরচ না করলেও হতো, কিন্তু খরচ হয়ে গেছে। সেই টাকাগুলোও সঞ্চয়ে যাবে।
শেষ ধাপ বাজেট বাস্তবায়ন। এই ধাপে এসে মনে রাখতে হবে, বাজেটের উদ্দেশ্য খরচ কমানো নয়, বরং অপচয় কমানো। বাজেটে যা বরাদ্দ আছে, সেটা দিয়েই পুষ্টিকর খাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, কারও অসুখ হলো চিকিৎসা করতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। কোনোটাই কম গুরুত্বপূর্ণ না। টাকা বাঁচাতে গিয়ে যদি পরিবারের মানুষ খারাপ থাকে, তাহলে সেটা বাজেটের ব্যর্থতা।