আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত—দেশের বড় তিন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টন, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম ও মতিঝিলের আশপাশ এলাকার বিভিন্ন বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকানপাট বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁরা। আবার নতুন করে হরতাল ঘোষিত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তাও তত বাড়তে থাকে। আর রাজনীতিতে যখন সহিংসতা যুক্ত হয়, তখন দুশ্চিন্তা বাড়ে ব্যবসায়ীদের। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দোকানপাট খুলতেও আতঙ্কে থাকেন ব্যবসায়ীরা। তাই সব শ্রেণির ব্যবসায়ী ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চান।
‘সাধারণত সভা-সমাবেশ হলেও আমাদের মার্কেটে দোকানপাট খোলা থাকে। কিন্তু বড় সমাবেশ হওয়ায় পলওয়েলসহ আশপাশের সব মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসায়ীরা। এতে সব প্রতিষ্ঠানই কম-বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আমরা ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে চাই।’জসিম উদ্দিন, নয়াপল্টনের পলওয়েল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ ও নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ এবং মতিঝিলে জামায়াতের সমাবেশকে ঘিরে গতকাল শনিবার সকাল থেকে এসব এলাকার দোকানপাট ছিল বন্ধ। সরেজমিনে দেখা যায়, নয়াপল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা, আরামবাগ, মতিঝিল, ফকিরেরপুল ও গুলিস্তান এলাকার বেশির ভাগ বিপণিবিতানই বন্ধ ছিল।
এসব এলাকায় গাড়ির শোরুম থেকে শুরু করে, স্বর্ণালংকার, ব্যাগ, কার্ড, ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকান ও শোরুম, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ নানা ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কর কার্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরও রয়েছে এসব এলাকায়। এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাতে গোনা কিছু খাবার, ওষুধ ও মুদিদোকান খোলা ছিল। গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের দু–একটি ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকান সকালে খোলা হলেও দুপুরের দিকে সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তবে সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কার্যালয়গুলো এমনিতে বন্ধ ছিল।
নয়াপল্টনের পলওয়েল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণত সভা-সমাবেশ হলেও আমাদের মার্কেটে দোকানপাট খোলা থাকে। কিন্তু বড় সমাবেশ হওয়ায় পলওয়েলসহ আশপাশের সব মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসায়ীরা। এতে সব প্রতিষ্ঠানই কম-বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আমরা ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে চাই।’
‘মহাসমাবেশ ঘিরে খাবারের চাহিদা থাকতে পারে, সেই আশায় দোকান খুলেছি। কিন্তু অন্যান্য দিন যে পরিমাণ বেচাকেনা হয়, তার অর্ধেকও বিক্রি করতে পারিনি।’মো. ইয়ামিন, পল্টনের মোড়ের তাজমহল বিরিয়ানির দোকানের বিক্রেতা
সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশির ভাগ বিপণিবিতানে ব্যবসায়ী সমিতি বা কমিটির পক্ষ থেকে দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে দোকানপাট বন্ধের সুপারিশ করা হয়।
পল্টনের মোড়ের তাজমহল বিরিয়ানির দোকানের বিক্রেতা মো. ইয়ামিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসমাবেশ ঘিরে খাবারের চাহিদা থাকতে পারে, সেই আশায় দোকান খুলেছি। কিন্তু অন্যান্য দিন যে পরিমাণ বেচাকেনা হয়, তার অর্ধেকও বিক্রি করতে পারিনি।’
গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেটের একটি ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানের মালিক ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে একই বক্তব্য পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আতঙ্কের মধ্যে দোকান খুলেছি। কয়েকজন পাওনাদারের টাকা পরিশোধের কথা ছিল, তাই দোকান খুলেছি।’