খুচরা বাজারে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেশি হলেও পোলট্রি খামারিরা উৎপাদনমূল্য পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে তাঁদের সমিতি বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন। সমিতির নেতারা বলছেন, খামারগুলোয় একই সঙ্গে উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে বন্ধ হচ্ছে ডিম ও মুরগি উৎপাদনের কোনো না কোনো খামার। নতুন বিপদ হচ্ছে চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারা।
আজ রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়ে পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক করে বলেছে, পোলট্রিশিল্পের খাদ্য তৈরির উপকরণ আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে না পারলে আগামী দিনে আরও খামার বন্ধ হয়ে যাবে এবং বাজারে ডিম ও মুরগি সরবরাহে সংকট আরও বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব খোন্দকার মো. মহসিন। এতে বলা হয়, করোনার সময় থেকে এখন পর্যন্ত পোলট্রি খাত থেকে কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন কয়েক লাখ কর্মজীবী মানুষ। প্রতিদিনই এ খাত থেকে চলে যাচ্ছেন কেউ কেউ। অ্যাসোসিয়েশনের নিবন্ধন পাওয়ার পর তাদের ৩১ বছরের ইতিহাসে এ খাতে এমন নাজুক অবস্থা কখনো আসেনি।
জানানো হয়, বছরে ৫ হাজার ২৭৩ টন মুরগির মাংস উৎপাদনক্ষমতার ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৯টি খামার থাকলেও দেশে চালু আছে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার, আর বর্তমানে উৎপাদিত হচ্ছে ৪ হাজার ২১৯ টন। উৎপাদন সক্ষমতা থেকে তা ২৬ শতাংশ কম। একইভাবে ডিম উৎপাদনের সক্ষমতা দৈনিক যেখানে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ৮২ হাজারটি, সেখানে উৎপাদিত হচ্ছে ৪ কোটি ৩২ লাখ ১৩ হাজার ৪১৮টি ডিম। এটিও উৎপাদন সক্ষমতা থেকে ২৫ শতাংশ কম।
সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি ও পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। ডিম ও মুরগির মাংসের খুচরা দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি বাড়ছে ক্রেতাদের মধ্যে। অথচ খামারিরা উৎপাদন মূল্যই পাচ্ছেন না—সংবাদ সম্মেলনে এ কথাও জানানো হয়।
বলা হয়, বর্তমানে ডিম ও মুরগি যে দামে বিক্রি হচ্ছে, এগুলোর উৎপাদন খরচ তার চেয়ে বেশি। গতকাল শনিবার গাজীপুরে ১টি ডিমের পাইকারি মূল্য ছিল ৯ দশমিক ৪৫ টাকা। অথচ একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১১ দশমিক ৭১ টাকা। প্রতি ডিমে ক্ষতি হচ্ছে ২ দশমিক ২৬ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পোলট্রির ডিম ও মাংস উৎপাদনে ৬৮ থেকে ৭০ শতাংশ খরচ হয় খাদ্যে। আর এ খাদ্যের বেশির ভাগ উপাদানই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। আমদানির জন্য আগে যে ডলার ৮৪ টাকায় কেনা যেত, এখন প্রতি ডলারের জন্য ১১০ টাকা দিতে হচ্ছে। তারপরও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে জাহাজভাড়া বৃদ্ধি, ডিজেল, বিদ্যুৎ, পরিবহনসহ সবকিছুরই দাম বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়েছে এসব কারণেই।
উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির আরও উদাহরণ দিতে গিয়ে সংগঠনটির মহাসচিব খোন্দকার মো. মহসিন জানান, ২০২০ সালের মাঝামাঝি প্রতি কেজি ভুট্টার দাম ছিল ১৭ দশমিক ৩০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি শুকনা ভুট্টার দাম ৩৮ টাকার বেশি। পোলট্রি খাদ্যে ভুট্টার ব্যবহার হয় ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া পোলট্রি খাদ্যে সয়াবিন খইলের ব্যবহার শতকরা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। যে সয়াবিন খইলের দাম ২০২০ সালে প্রতি কেজি ছিল ৩৫ টাকা, বর্তমানে তা ৮৪ টাকার বেশি।
মুরগির বাচ্চা নিয়েও কথা বলেন তিনি। জানান, মুরগির বাচ্চা বিক্রি করতে না পেরে মাঝেমধ্যেই এক দিনের লাখ লাখ বাচ্চা মেরে ফেলতে হচ্ছে।