অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে
অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে

মার্ক্সবাদী অনূঢ়া দিশানায়েকে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট, আইএমএফ চুক্তির কী হবে

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছেন মার্ক্সবাদী নেতা অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। তিনিই হচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে করা চুক্তির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তবে তাঁর দল এখন নিশ্চিত করেছে যে ২৯০ কোটি ডলারের ওই চুক্তি বাতিল করা হবে না।

বড় ধরনের আর্থিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংস্কার আনতে আইএমএফ যে কর্মসূচির আওতায় দেশটিকে ঋণ দিয়েছে, সেই কর্মসূচি সাধারণ মানুষের মধ্যে খুবই অজনপ্রিয়। ঋণের শর্তের কারণে অনেক মানুষের জীবনধারণ কঠিন হয়েছে। অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের রাজনৈতিক দল বলছে, ওই ঋণচুক্তি বাতিল না করা হলেও এটা নিয়ে পুনরায় দর–কষাকষি করা হবে।

ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের পলিটব্যুরো সদস্য বিমল রত্নায়েকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে দিশানায়েকে আইএমএফের সঙ্গে করা চুক্তি ‘ছিঁড়ে ফেলে দেবেন না’। তিনি জানান, তাঁদের পরিকল্পনা হলো আইএমএফের সাথে পুনরায় আলোচনা করে চুক্তির কিছু শর্তে পরিবর্তন আনা।

বিমল রত্নায়েকে বলেন, ‘আমরা আইএমএফের কর্মসূচি ছিঁড়ে ফেলব না। এটি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে নতুন করে দর–কষাকষি করার ব্যবস্থা এই চুক্তিতে রয়েছে।’

এই রাজনীতিবিদ বলেন, দিশানায়েকে আয়কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে আয়কর দ্বিগুণ করেছিলেন। এ ছাড়া খাদ্য ও ওষুধের ওপর বিক্রয় কর কমানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দিশানায়েকে। তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া আইএমএফের চার বছর মেয়াদি কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে বলে আমরা মনে করি।’

অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের বিরোধী পক্ষ অবশ্য সবাইকে এই বলে সতর্ক করেছিল যে মার্ক্সবাদী এই নেতা নির্বাচিত হলে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি বাতিল করে দেবেন এবং ২০২২ সালে যেমন অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল, দেশকে আবার তেমন অর্থনৈতিক সংকটের দিকে নিয়ে যাবেন।

সেই সময়ে শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে নিত্যপণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং তাদের বিক্ষোভের মধ্যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালান এবং দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।

বিমল রত্নায়েকে বলেন, ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে শ্রীলঙ্কাকে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বাইরে রাখবেন। তিনি মূলত আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত ও দেশটির সবচেয়ে বড় ঋণদাতা দেশ চীনের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে ইঙ্গিত করছিলেন।

শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভারত মহাসাগরে জাহাজ চলাচল পথের ওপর অবস্থিত। নয়াদিল্লি মনে করে যে কলম্বোর ওপর বেইজিংয়ের প্রভাব বেড়ে চলছে এবং তারা এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিমল রত্নায়েকে বলেন, ‘আমরা আশ্বস্ত করেছি যে অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার ভূখণ্ড ব্যবহার করা হবে না। আমাদের এই অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা জানি। কিন্তু আমরা এতে অংশ নেব না। আমাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কোনো দেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে আমরা অংশ নেব না।’

তবে একই সাথে রত্নায়েকে জোর দিয়ে বলেন, তাঁর রাজনৈতিক দল আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পররাষ্ট্রনীতিও গ্রহণ করবে না। এই দলের সত্তর ও আশির দশকে সশস্ত্র সংগ্রাম করার ইতিহাস আছে, যাতে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল।

বিমল রত্নায়েকে বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনের অধীনে শ্রীলঙ্কা বিচ্ছিন্ন থাকবে—এমন যাতে কেউ আশঙ্কা না করে। আমরা বরং শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করব।’