রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের ঘটনায় গতকাল শনিবার বন্ধ ছিল এ এলাকার ৪২টি বিপণিবিতান। সেই এলাকার যান চলাচলও গতকাল বন্ধ ছিল।
তবে আজ রোববার সকাল থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক। বিপণিবিতানগুলো খুলতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে খুলে গেছে গাউছিয়া ও চাঁদনীচক মার্কেট। আশপাশের বিপণিবিতানগুলোও খুলতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে ফুটপাতের দোকানগুলো বসে গেছে।
রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল বন্ধ থাকা বিপণিবিতানগুলো খুলতে সকাল থেকেই দোকানকর্মীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন। সকাল ৯টার পর থেকে ক্রেতারা আসতে শুরু করে। অনেক ক্রেতা আজ আগেভাগে চলে এসেছেন, যাতে অতিরিক্ত গরমের মধ্যে দ্রুত কেনাকাটা শেষ করে বাসায় ফেরা যায়।
ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মার্কেটের বিদ্যুতের সংযোগ ভালোভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বেলা ১১টায় নিউমার্কেট খুলে দেওয়া হবে। ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে গোছগাছ শুরু করেছেন।’ ক্রেতাদের নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
একই সঙ্গে নুরজাহান মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নেহার ভবন শপিং সেন্টার, গ্লোব সুপার মার্কেট, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, নূর ম্যানশন শপিং সেন্টার, ইসমাইল ম্যানশন মার্কেট, সুবাস্তু অ্যারোমা সেন্টার শপিং মল, ইস্টার্ন মল্লিকা ও চন্দ্রিমা মার্কেটের মতো এ এলাকার যে ৪২টি বিপণিবিতান গতকাল বন্ধ ছিল, সেগুলো আজ খুলে যাবে বলে জানা গেছে।
তবে যে মার্কেটে গতকাল আগুন লেগেছিল, অর্থাৎ নিউ সুপার মার্কেট আজও বন্ধ থাকবে। তবে এ মার্কেটও দ্রুত চালু করার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।
চাঁদনীচক মার্কেটের নিউ হ্যাভেন ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. সোহেল আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোকান খোলা হয়েছে। গতকাল বন্ধ থাকায় আজ ক্রেতাদের চাপ একটু বেশি থাকবে বলে আশা করছি। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’
এদিকে সকাল থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় রাস্তার পাশে পণ্যের পসরা সাজাতে শুরু করেছেন হকাররা। গাউছিয়া মার্কেটের ভ্যানিটি ব্যাগ বিক্রি করেন আবদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল নয়টা থেকে বসে গেছি। গতকাল বেচাকেনা করতে পারিনি। আজ ভালো বেচাবিক্রির আশা। ঈদের সময় একটা দিন লোকসান মানে বড় অঙ্কের ক্ষতি।’
মুন্নি আক্তার নামের এক গৃহিণী ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বেশ আগেভাবেই মিরপুর ১০ সার্কেল এলাকা থেকে গাউছিয়া মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সকালে টেলিভিশনে খবর দেখে জেনেছিলাম, আগুন লেগেছে। তাতে আর আসা হয়নি। বেশ কিছু কেনাকাটা বাকি, সে জন্য আজ একটু সকাল সকাল চলে আসলাম।’
এ আগুনের ঘটনায় গতকাল শনিবার বেচাকেনা করতে পারেননি আশপাশের ৪২টি বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরা। আগুন নেভানোর কাজের সুবিধার্থে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব বিপণিবিতান বন্ধ ছিল।
তবে সন্ধ্যার দিকে কয়েকটি বিপণিবিতানের দোকান খোলার চেষ্টা করা হলেও এসব বিপণিবিতানের প্রবেশসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে রাজধানীর ‘মার্কেট হাব’ হিসেবে পরিচিত এই এলাকার বেশির ভাগ বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরা গতকাল তেমন একটা ব্যবসা করতে পারেননি। এতে ঈদের আগে ভরা মৌসুমে এক দিনে কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনের মাত্র ১১ দিন পর গতকাল ভোরে আগুন লাগে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে (দক্ষিণ)। তিনতলা এ বিপণিবিতানের তৃতীয় তলায় গতকাল ভোরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৩১টি ইউনিট কাজ করে।
ভয়াবহ আগুনে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় কমপক্ষে ২৫০টি দোকান পুড়ে গেছে। বেশির ভাগই কাপড়ের দোকান। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকার মতো হবে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
অগ্নিকাণ্ডে কেউ মারা যায়নি। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৪ কর্মীসহ ৩২ জন আহত হয়েছেন। তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়েছেন।